ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথায় নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে বিনামূল্যে ছাগল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নামমাত্র কম দামি ছোট ছাগল ও ছাগল পালনের জন্য নিম্নমানের ঘর বিতরণ করে বরাদ্দের বেশিরভাগ অর্থ সংশ্লিষ্টরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ছাগল বিতরণ করা হয়।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে নিবন্ধিত জেলেদের পুনর্বাসন প্রকল্পে বিকল্প কর্মসূচির আওতায় ৪ লাখ ৪ হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দ আসে। নিয়মানুযায়ী বরাদ্দের এই টাকা দিয়ে ২০ জন নিবন্ধিত জেলের মাঝে দুইটি করে ছাগল ও ছাগল পালনের একটি ঘর দেওয়ার কথা। তাতে প্রত্যেক জেলের জন্য ২০ হাজার টাকার বেশি বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
২৭ সেপ্টেম্বর ছাগল বিতরণকালে দেখা যায়, প্রত্যেক জেলেকে অসুস্থ ও কম বয়সী দুইটি করে ছাগলের বাচ্চা ও পালনের জন্য ছোট একটি করে ঘর দেওয়া হচ্ছে।
এ সময় উপকারভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ঘরগুলো দেখতে হাঁস-মুরগির আবাসনের জন্য তৈরি ঘরের মতো। ছাগলগুলোও কম দামি। সব মিলিয়ে প্রত্যেক জেলেকে ৭-৮ হাজার টাকার মধ্যে ছাগল, ঘর ও খাবার দেওয়া হয়েছে। তাহলে বরাদ্দের বাকি টাকা কোথায় গেল?।
উপজেলার ভাওয়াল গ্রামের জেলে উপকারভোগী সুজন মালো বলেন, আমাকে যে দুইটি ছাগল দেওয়া হয়েছে, তার দাম সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা হবে। আবার যে ঘরটি পেয়েছি তা তৈরিতে সর্বোচ্চ খরচ হতে পারে দেড় হাজার টাকা। সঙ্গে দিয়েছিল ১০ কেজি গমের ভুসি, যার দাম ৫০০ টাকার মতো। সব মিলিয়ে ৭ হাজার টাকা মূল্যের জিনিস দিয়েছে।
পলাশ মালো বলেন, প্রত্যেক জেলের জন্য কত টাকা বরাদ্দ -তা আমাদের জানানো হয়নি। ছাগলসহ হয়তো ৬-৭ হাজার টাকার জিনিস পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ভাওয়াল জেলে পল্লীতে ৫ জন জেলেকে ছাগল দেওয়া হয়েছে। সব কয়টি ছাগলই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কয়টা বাঁচে, আর কয়টা মরে তা বলা যায় না। ছাগলগুলো আরও বড় দিলে ভালো হতো।
সুরেশ মালো নামে আরেক জেলে বলেন, গত বছর আমাদের জেলে পল্লীতে যেসব ছাগল দেওয়া হয়েছিল, তার বেশিরভাগ ছাগলই মারা গিয়েছিল। এবার সেই একই ধরনের অসুস্থ ছাগল দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য পূরণ হওয়া দূরের কথা, আরও বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে।
জানা গেছে, বরাদ্দে ৪ লাখ ৪ হাজার ৯০০ টাকা মধ্যে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার ছাগল, ঘর ও খাবার বিতরণ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বাকি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, ছাগল ও ঘর সরবরাহকারী ও একজন প্রভাবশালী নেতা সিন্ডিকেট করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার জামান সাবু বলেন, প্রতিটি ছাগল ৭ কেজি ওজনের ওপরে কেনার কথা। আমরা দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারের মাধ্যমে ৭-৯ কেজি ওজনের প্রতিটি ছাগল কিনেছি। যার প্রতিটি ছাগলের মূল্য সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা। ঘরও নিয়মানুযায়ী দেওয়া হয়েছে। ছাগলের খাবার দেওয়ার কথা না থাকলেও আমরা ১০ কেজি করে খাবার দিয়েছি।
অসুস্থ ছাগল বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছর বেশ কিছু ছাগল মারা গেছে। তাই এবার ছাগলগুলো বিতরণের ভ্যাকসিন পুশ করে দিয়েছি। ওষুধও খাওয়ানো হয়েছে। তারপরেও অনেকে অনেক কথা বলছে। তবে ছাগল ও ঘর বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।
এসব ব্যাপারে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালীর সঙ্গে বললে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি মাত্রই জানলাম। তবে যারা ছাগলগুলো পেয়েছে, তারা যদি অভিযোগ করেন, তাহলে হয়তো খতিয়ে দেখব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২৩
এসআরএস