ঢাকা: হাট-বাজারের তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনা স্মার্ট ভূমি সেবার আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভূমিসচিব মো. খলিলুর রহমান।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা ২০২৩ প্রণয়ন সম্পর্কিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মন্ডলসহ কর্মশালায় ভূমি মন্ত্রণালয় এবং আওতাভুক্ত দপ্তর ও সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভূমিসচিব বলেন, স্মার্ট ভূমি সেবার আওতায় আনার অংশ হিসেবে হাট ও বাজারের তথ্য ভূমি তথ্য ব্যাংকে (ল্যান্ড ডাটা ব্যাংক) আপলোড করা হচ্ছে। এতে দেশের সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে হাট-বাজার আরও দক্ষতার সঙ্গে ইজারা দেওয়া সম্ভব হবে এবং রাজস্ব বাড়বে। সর্বোপরি দেশের মানুষ এর সুফল পাবে।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী গত ৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা), ২০২৩’ বিলটি উপস্থাপন করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের খসড়াকৃত বিলটি উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ছাড়াই জাতীয় সংসদে আইন হিসেবে প্রণীত হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এ আইনের গেজেট প্রকাশ হয়। বর্তমানে এর বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। শিগগিরই হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা ২০২৩ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
জানা গেছে, ‘হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২৩’ প্রণয়ন করার সঙ্গে ‘হাট ও বাজার (স্থাপন ও অধিগ্রহণ) অধ্যাদেশ, ১৯৫৯’ রহিত করা হয়। নতুন আইনের আওতায় হাট ও বাজারের সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখলে রাখা অথবা যথাযথ অনুমতি ছাড়া ওই খাস জমির ওপর কোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন লঙ্ঘনকারীর অনধিক এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
হাট ও বাজার আইনে সরকারি অনুমতি প্রাপ্তির পূর্বশর্তসহ জনস্বার্থে সরকারি বা বেসরকারি অর্থায়নে অথবা বৈদেশিক সাহায্যে আধুনিক বহুতলবিশিষ্ট বিপণিভবন (মার্কেট) নির্মাণের বিধান রয়েছে। এসব ভবনের ব্যবস্থাপনা ও আয় বণ্টন নির্ধারিত পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে।
আইনে হাট-বাজারে কোনো জমির স্থায়ী বন্দোবস্ত বা ইজারা দেওয়া নিষিদ্ধ, শুধুমাত্র বার্ষিক ইজারা দেওয়া যাবে। উপরন্তু, নিয়মিত ইজারা বাইরে হাট-বাজারের একটি সংরক্ষিত খালি জায়গা কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার জন্য তোহা বাজার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। স্থায়ী হাট ও বাজারের পাশাপাশি এ আইনে অস্থায়ী হাট ও বাজার স্থাপনেরও বিধান রাখা হয়েছে।
হাট ও বাজার স্থাপনকারী কর্তৃপক্ষ হাট ও বাজারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা, এর রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন, প্রযোজ্য টোল, কর, রেট বা ফি আদায়সহ সব কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে পারবে।
আইন অনুযায়ী হাট-বাজারের মালিকানা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং বিধান লঙ্ঘন করে ভূমিতে কোনো হাট বা বাজার স্থাপন করলে সরকার জমি ও সব স্থাপনা বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।
আইন অনুযায়ী, হাট ও বাজার বা হাট বা বাজার শব্দগুলো এমন কোনো স্থানকে বোঝায় যেখানে সাধারণ মানুষ কৃষিপণ্য, ফলমূল, পশু, হাঁস-মুরগি, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য, খাদ্য ও পানীয়, শিল্প পণ্য এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য দৈনিক ভিত্তিতে বা সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে কেনা-বেচা করে।
ওই স্থানে পণ্য কেনা-বেচার জন্য প্রতিষ্ঠিত দোকানও এর অন্তর্ভুক্ত। ২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে মোট হাট ও বাজার সংখ্যা ১০ হাজার ২৭৩টি। এর মধ্যে ৭ হাজার ৯৭২টি ইজারাকৃত হাট ও বাজার থেকে সরকারের প্রায় ৭৪৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩
জিসিজি/আরএইচ