বরিশাল: নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলে বৃহৎ জনগোষ্ঠী সমুদ্রসহ নদ-নদী থেকে মৎস্য আহরণের পেশার সঙ্গে জড়িত। মৎস্য আহরণের কাজে জাল আর নৌকার ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকতার পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহারও হচ্ছে মাছ ধরার নৌকাগুলোতে, তবে নৌকা তৈরির সরঞ্জামের দাম বাড়ায় দিন দিন বেড়েই চলছে নৌকা দাম। তারপরও পেশা ও প্রয়োজনের তাগিদে নতুন নতুন মাছ ধরার নৌকার চাহিদা কখনও কমেনি বলে দাবি এর কারিগরদের।
বরিশালের হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় যুগের পর যুগ ধরে বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার নৌকা তৈরি করা হয়ে থাকে। এখানকার তৈরি নৌকা দিয়ে বৃহত্তর মেঘনা, কালাবদর, আড়িয়াল খাঁ, কীর্তনখোলা, তেতুলিয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদী এমনকি বঙ্গোপসাগরেও মাছ শিকারে যান জেলেরা।
নৌকার কারিগর মোজাম্মেল হক বলেন, কদর কমেনি মাছ শিকারের কাজে ব্যবহৃত নৌকার, তবে কাঠসহ নৌকা তৈরির সব সামগ্রীর মূল্য বাড়ায় তুলনামূলক কমেছে কারিগরদের শ্রমের মজুরি।
তিনি বলেন, বাংলাবাজার এলাকায় নৌকা তৈরির কাজ যুগের পর যুগ ধরে চলছে। এ কাজে কোনো সহযোগীর প্রয়োজন হয় না, তাই এখানে একজন মহাজনের অধীনে বর্তমানে আটজন কারিগর কাজ করছি। প্রতিদিন মজুরি ছয় থেকে আটশ’ টাকা পর্যন্ত। তবে বর্তমান বাজারে এ বেতন দিয়ে সংসার চালানো দায়।
মামুন হোসেন নামে অপর নৌকার কারিগর বলেন, ‘৮০ টাকার ধূপ এখন দেড়শ’ টাকায় কিনতে হয়। আবার ৪-৬ শ’ টাকার কাঠ কিনতে হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। নৌকা তৈরির সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুই লাখ টাকার নৌকা বানাতে এখন সাত লাখ পড়ে যায়। যখন কোনো কিছুর দাম আর কমানো যাচ্ছে না, তখন সবার হাতটা পড়ে আমাদের মজুরির ওপর। ’
যদিও মৌসুমে ২০-২৫টি ছোট ও বড় মাছ ধরার নৌকা বানিয়ে বিক্রি করতে পারলে মহাজন ও কারিগরদের বছরটা তেমন একটা খারাপ যাবে না বলে জানিয়েছেন লাল চান।
তিনি বলেন, এখানে চিকন বা ছোট ডালি আর মোটা বা বড় ডালি এ দুই ধরনের মাছ ধরার কাজ বেশি হয়। সেক্ষেত্রে চিকন ডালি অর্থাৎ ২৫-২৬ হাত লম্বা নৌকার মূল্য ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ পর্যন্ত পড়ে যায়, আবার ৪০-৫০ হাত লম্বা নৌকার মূল্য পাঁচ থেকে আট লাখ পর্যন্ত পড়ে যায়।
২৫-২৬ হাত একটি নৌকা বানাতে ২০-২৫ দিন সময় লাগে জানিয়ে লাল চান বলেন, সারাবছরই বাংলা বাজারে আমরা নৌকা তৈরির কাজ করি। বিক্রিও সারা বছর ধরে হয়। তবে মৌসুমে ২০-৩০টি নৌকা বিক্রি হলে বছরটা ভালো যায়।
আর পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে নৌকা বানানোর কাজটি শিখেছেন জানিয়ে সাহাবুদ্দিন ও সাইফুল নামে অপর দুই নৌকার কারিগর বলেন, এখন যে অন্য কাজ করবো তারও সুযোগ নেই। নৌকার কাজ না থাকলে বসে বসে খেতে হয়, আর কাজ থাকলে তো ভালো।
তবে সারাবছর এ কাজ থাকে না জানিয়ে তারা বলেন, যখন কাজ থাকে না তখন অন্য কাজে গেলে এ স্থায়ী কাজটি হারানোর ভয়ও থাকে।
তবে সামনে ছোট মাছের মৌসুম হওয়ায় বেশ কিছু চিকন ডালির নৌকা বিক্রি হবে জানিয়ে আলাউদ্দিন বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নৌকার তৈরির সামগ্রী আমাদের এখানে বানানো হয়। তাই এখানের নৌকার মান ভালো হওয়ায় তুলনামূলক কাজ বছরজুড়েই থাকছে। অনেকে তো আগাম তৈরি করতে দেয়। এ সময়ে চিকন ডালির নৌকা বেশি বিক্রি হবে। আর এখানকার তৈরি নৌকা মেহগনি গাছের হওয়ায় এগুলো দীর্ঘস্থায়ীও হয়। তবে চাহিদা অনুযায়ী অন্য গাছের কাঠও নৌকা তৈরিতে ব্যবহার করি।
প্রসঙ্গত, বরিশালের হিজলা উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে বছরে শুধু মাছ ধরার নৌকা বিক্রি হয় প্রায় দুই শতাধিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪
এমএস/আরআইএস