নাটোর: দীর্ঘ ১৪ বছর আত্মগোপনে থাকা নাটোরে অজ্ঞাত পরিচয় এক মহিলাকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মো. বেলাল হোসেনকে (৪৯) ঢাকার সাভার থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৫)।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় র্যাব।
এর আগে রোববার (১৪ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাভারের ১ নম্বর কলমা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি অপারেশন দল। এতে নেতৃত্ব দেন র্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোর ক্যাম্প কোম্পানি অধিনায়ক ও সিনিয়র সহকারি পরিচালক সন্জয় কুমার সরকার। অভিযানে সহযোগিতা করেন র্যাব-৩, সিপিএসসি, টিকাটুলি ঢাকা।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বেলাল হোসেন জেলার সদর উপজেলার উলিপুর (গুচ্ছগ্রাম) গ্রামের মৃত জব্বার হোসেনের ছেলে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামস্থ জনৈক নূর মোহাম্মদ মুন্সীর আম ও কলা বাগানের মধ্যে একজন অজ্ঞাতনামা মহিলার মরদেহ পাওয়া যায়। এ সময় মহিলার গলায় ওড়না প্যাচানো অবস্থায় ছিল এবং মরদেহ উদ্ধারের সময় পুলিশ একটি পার্সব্যাগ, একজন মহিলার ছবি ও একটি নোটবুক জব্দ করেন। পরে তদন্তে করলে বেলাল হোসেন ও তার স্ত্রী জেসমিন অরফে জোন্সা নামে দুইজনের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে জেসমিন অরফে জোন্সাকে গ্রেপ্তার করে আর তার স্বামী বেলাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেন। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই বেলাল হোসেন পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নুরুজ্জামান বাদি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ধারায় মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ওই মামলার আসামি জেসমিন অরফে জোন্সা অসামাজিক কার্যকলাপে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ সূত্রে আসামি বেলাল হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তারা কথিত স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বালিয়াডাঙ্গী গ্রামে জোন্সার বাবার বাড়িতে বসবাস করতেন।
পাশাপাশি বেলাল হোসেন বিভিন্ন স্থান থেকে অসৎ চরিত্রের মেয়েদের নিয়ে আসতো এবং জোন্সাসহ উক্ত মেয়েদের বেশ্যাবৃত্তি কাজে ব্যবহার করাতেন। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন, অজ্ঞাতনামা মৃত মহিলা ঘটনার কয়েকদিন পূর্ব থেকে ঘটনাস্থল এলাকায় বেলাল হোসেন ও জোন্সার সঙ্গে ঘোরাফেরা করত। আর বেলাল হোসেন প্রায় সময় অজ্ঞাতনামা মৃত মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করতেন। অপরাধ গোপন করার জন্য বেলাল ও জেসমিন মিলে অজ্ঞাতনামা মহিলার গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং অজান্তে তাদের ব্যবহৃত পার্সব্যাগ, ছবি ও নোটবুক ঘটনাস্থলে ফেলে যায়।
পরে মামলাটি পেনাল কোড ৩০২/৩৪ ধারায় রুজু হলেও সাক্ষ্য প্রামাণের ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি বেলাল ও জোন্সার বিরুদ্ধে আদালতে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ এর ৯(২)/৩০ এ অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
বিজ্ঞ নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন ট্রাইবুন্যাল ওই মামলার বিচার শেষে আসামিদের যাবজ্জীবন সাজাসহ এক লাখ টাকা করে জরিমানা এবং পলাতক আসামি বেলালের বিরুদ্ধে নাটোর জেলার সদর থানা বরাবর ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন।
অবশেষে দীর্ঘ ১৪ বছর আত্মগোপনে থাকা অজ্ঞাত মহিলাকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. বেলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে নাটোর সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
র্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোর ক্যাম্প কোম্পানি অধিনায়ক ও সিনিয়র সহকারি পরিচালক সন্জয় কুমার সরকার বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
এসএম