কক্সবাজার: কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে পর্যটকদের টার্গেট করে পতিতাবৃত্তি, মাদক কারবার, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৮ জনকে আটক করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
পুলিশের মতে, আটকরা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) মো. আপেল মাহমুদ।
অপরাধী চক্রের আটক সদস্যরা হলেন—বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার কালবিলা এলাকার গনেশ বৈদ্যের ছেলে প্রকাশ বৈদ্য (১৯), একই উপজেলার শিকারপুর এলাকার সিরাজ হাওলাদারের ছেলে মো. রাকিব (২০) ও আব্দুল করিম বেপারীর ছেলে মো. সাব্বির (১৯), কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাঘুইগ্রাম এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে সানি আলম (২২), একই এলাকার মো. জয়নালের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম (২১) ও হারুনুর রশিদের ছেলে ইয়ানুর রশিদ (১৯), চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার রায়পুর এলাকার আবুল বশরের ছেলে মো. সাখাওয়াত হোসেন (৩৩), সাতকানিয়া উপজেলার আমিরখিল এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে মিজানুর রহমান (২০), চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী আদর্শগ্রাম এলাকার মো. রিয়াজ (২২) ও একই এলাকার আব্দুল মাহাবুবের ছেলে মো. ইকবাল (২২), বান্দরবান জেলার আলিকদম উপজেলার আলী মেম্বার পাড়ার আব্দুল হাকিমের ছেলে মো. মিজবাহ (২৫) এবং চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা থানার কাটাঘর এলাকার মো. ইউসুফের মেয়ে কুলসুমা বেগম (২৫), ঢাকা শহরের আশুলিয়া থানার আটিপাড়ার মোকতার মাতব্বরের মেয়ে মুক্তা আক্তার (২৩), কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকার ফজল মিয়ার মেয়ে তৈয়বা আক্তার (১৯), শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার মো. আকবর আলীর মেয়ে আকলিমা আক্তার (২০), বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার লোহাগড়া এলাকার পেঠান আলীর ওরফে ফেরাইন্ন্যার মেয়ে ইমু বেগম (২৪), ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার কালুয়াবাজার এলাকার বাদশা হাওলাদারের মেয়ে লামিয়া বেগম (২০) ও গোপালগঞ্জ জেলার মুকসেদপুর উপজেলার কটিকামারি এলাকার আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রিয়া মনিকে (২২) আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার ঘুরতে এসে শহরের কটেজ জোন এলাকায় অবস্থানকারী কয়েকজন পর্যটকের কাছ থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশ কিছু অভিযোগ পায়। এর প্রেক্ষিতে সোমবার গভীর রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫টি কটেজ থেকে ৭ জন নারীসহ সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের ১৮ জন সদস্যকে আটক করেছে।
অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক বলেন, আটকরা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্যরা আবাসিক কটেজ জোন কেন্দ্রিক পতিতাবৃত্তি, মাদক কারবার, ছিনতাই, অপহরণ ও গোপনে ভিডিওচিত্র ধারণ করে পর্যটকদের জিম্মি করাসহ নানা অপরাধ সংঘটনের সাথে জড়িত।
কক্সবাজার শহরের পর্যটন এলাকায় দুই শতাধিক আবাসিক কটেজ রয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে সাইনবোর্ড বিহীন ৬টি কটেজের বিরুদ্ধে নানা অপরাধ সংঘটনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে আবাসিক কটেজ জোন কেন্দ্রিক সক্রিয় সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের পুলিশ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে সব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, এসব অপরাধীরা পর্যটকদের দালালদের মাধ্যমে রাত্রিযাপনের জন্য কটেজে নিয়ে আসে। পরে সুযোগ বুঝে নারীদের দিয়ে এসব পর্যটকদের ফাঁদে ফেলানো হয়। এরপর গোপনে ভিডিওচিত্র ধারণ করে পর্যটকদের জিম্মি করে সবকিছু লুট করে সর্বস্বান্ত করা হয়। এসব কটেজে পতিতাবৃত্তির পাশাপাশি চলছে মাদক ব্যবসাও।
এসব আবাসিক কটেজের গোপন কক্ষে পর্যটকদের জিন্মি রেখে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, গুরুতর অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ ওঠা অবৈধভাবে পরিচালিত ৬টি কটেজে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসবি/এমজেএফ