ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ সাংবাদিক আমিনুল চৌধুরী আর নেই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ সাংবাদিক আমিনুল চৌধুরী আর নেই

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রবীণ সাংবাদিক সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য আমিনুল ইসলাম চৌধুরী (৮৫) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন)।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

 

মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে, দুই মেয়ে, আত্মীয় স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জের সব গণমাধ্যমকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।  

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী জগলু। তিনি বলেন, রোববার বাদ মাগরিব সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জানাযা ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব ওনার প্রদান শেষে মালশাপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।  

জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুকা গ্রামে জন্ম নেওয়া আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর বাবা আজিজুল ইসলাম চৌধুরী যুক্ত ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে। তিনি কংগ্রেস করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি রতনকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। মা আফতাব মহল ছিলেন গৃহিণী। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আমিনুল তৃতীয়। বাহুকা পাঠশালা থেকে তার লেখাপড়া শুরু হয়ে বিএ শেষ করেন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে। তারপর মাস্টার্সে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।

ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে আমিনুল ইসলামের সংগ্রামী জীবন শুরু। সিরাজগঞ্জ কলেজছাত্র সংসদের আওয়ামী ছাত্রলীগের প্রথম জিএস নির্বাচিত হন তিনি। পরে ১৯৬৮-৬৯ সালে গঠিত নিউক্লিয়াসের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং সরাসরি সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ভাটপিয়ারী পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলিটি তার নিতম্বের ডান পাশে বিদ্ধ হয়। দেশ স্বাধীনের পরে তিনি রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। আমিনুল ইসলাম দৈনিক ইত্তেফাকের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো চিফ হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। তিনি সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।  

এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি ড. জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. কে এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সিরাজগঞ্জ পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিরাজগঞ্জ জেলা কমান্ড, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।