ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে অভিযান, ৫ দালালের কারাদণ্ড 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪
লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে অভিযান, ৫ দালালের কারাদণ্ড 

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালের হয়ে দালালরা রোগীদের সদর হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

 

রোগীদের পাশাপাশি দালালদের হাতে অনেকটা জিম্মি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।  

দালালদের এমন উৎপাতের কারণে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে আটক করে।  

পরে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করা হয়। এদের মধ্যে ৫ জন দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাদের প্রত্যেকের ১০ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওমর ফারুক (২৭), আমিনুল (২৩), রহমান আল আজাদ (৩৭), সুজন (২৩) ও আকরাম হোসেন (২৭)।  

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্যথোয়াইপ্রু মারমা।  

তিনি বলেন, অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৫ জন দোষী সাব্যস্ত হয়। তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করায় প্রত্যেকের ১০ দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক জনগণ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে এদের হাতে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়। যা আইনত অপরাধ।  

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর হাসপাতালকে ঘিরে প্রতিনিয়ত দালালচক্র ওৎ পেতে থাকেন। কোনো রোগী হাসপাতালে এলে তারা রোগীদের পিছু নেন। বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা।  

কয়েকজন রোগী অভিযোগ করেন, সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই বা টেস্ট রেজাল্ট ভালো হয় না এমন কথা বলে তারা রোগীদের অন্য হাসপাতালে যেতে প্রলুব্ধ করেন। এছাড়া ভর্তিকৃত রোগীদের কাছে ওষুধ বিক্রির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন হাসপাতাল সংলগ্ন ফার্মেসির নিয়োজিত কর্মীরা। এতে বাধ্য হয়ে চড়া দামে ওষুধ কিনতে হয় রোগী বা তাদের স্বজনদের।

রোগী বা তাদের স্বজনরা জিম্মি থাকে হাসপাতালের সামনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স চালকদের হাতে। গুরুতর রোগীদের অন্য হাসপাতালে নিতে হলে তাদের নির্ধারিত ভাড়ায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়। হাসপাতাল কেন্দ্রিক অ্যাম্বুলেন্স চালকরা শক্ত সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছে। খোদ হাসপাতালের অভ্যন্তরে তাদের আধিপত্য রয়েছে বলে অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজনদের।  

সেবা গ্রহীতা এক নারী বাংলানিউজকে বলেন, রোগী এলে দালালরা পিছু নেয়। জরুরি প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে ওষুধ নিলেও ১০ টাকার ওষুধ ৩০ টাকা দাম নেয়।  

আরেকজন নারী বলেন, সদর হাসপাতালে কোনো টেস্ট করাতে না পারলে দালালরা বাহিরের প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চড়া মূল্যে টেস্ট করাতে হয়। এর কমিশন পায় দালালরা।  

হাসপাতালের দালালদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি রোগী ও তাদের স্বজনদের।  

হাসপাতালের দালাল চক্রের বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন আহমেদ কবীর বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতাল ঘিরে দালাল চক্র আছে। আমি যখন হাসপাতালে থাকি, তখন দালাল থাকে না। কিন্তু আমরা তো সবসময় পাহারা দিতে পারি না। আমাদের সিকিউরিটি গার্ড নেই।  

তিনি বলেন, দালালদের বিষয়টি আমরা নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বলে আসছি, যাতে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। আজকে (৭ ফেব্রুয়ারি) অভিযান চালানো হয়েছে। এখন হয়ত উৎপাত কিছুটা কমবে। তবে নিয়মিত অভিযান চালানোর জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।