ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ভারতে ফিরতে চান পাচার হয়ে আসা সঙ্গীতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪
ভারতে ফিরতে চান পাচার হয়ে আসা সঙ্গীতা সঙ্গীতা মণ্ডল

বরিশাল: পাচার হয়ে বাংলাদেশে আসা সঙ্গীতা মণ্ডল এবার নিজভূমি ভারতে ফিরতে চাইছেন। এজন্য ভারত সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন এই তরুণী।



শৈশবের হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো আর ছয় বছর বয়সে বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর নানান বঞ্চনার মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত আসা জীবন সঙ্গীতার কাছে পরম বিস্ময়।  বর্তমানে সঙ্গীতা মণ্ডল বরিশালের বিসিক শিল্প নগরীর রীণা কটন মিলসের স্বত্বাধিকারী নাজমুন নাহার রীণার কারখানায় কাজ করছেন।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কারখানায় গিয়ে দেখা যায় কাজে ব্যস্ত সঙ্গীতা।  

সঙ্গীতা বলেন, আমার বাড়ি কলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের ভুরগাছি গ্রামে। বাবা গুরুপদ মণ্ডল, মা পার্বতী মণ্ডল। আমার চাচা রাহুল মণ্ডল। যখন আমার বয়স আনুমানিক পাঁচ অথবা ছয় বছর তখন চাচার কারণে আমার মা-বাবা খুন হন। আমি সেসবই চোখের সামনে দেখেছি। তারপর চাচা আমাকে এক লোকের কাছে বিক্রি করে দেন। তিনি আমাকে বেনাপোলে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে কিছুদিন মাদারীপুর কারাগারে ছিলাম। ওখান থেকে আমাকে বরিশাল সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ওই কেন্দ্রে কাজ শিখে বর্তমানে রীণা কটন মিলসে নিযুক্ত হয়েছি।

সঙ্গীতা বলেন, আমি আমার চাচার ফাঁসি চাই। তার জন্য আমাকে এতিম হতে হয়েছে। আমার জীবন বলতে এখন আর আসলে কিছুই নেই। শুধু ভেসে ভেসে বড় হচ্ছি।  

রীণা কটন মিলসের স্বত্বাধিকারী নাজমুন নাহার রীণা বলেন, সঙ্গীতা আমাকে যা বলেছে তা খুবই হৃদয়বিদারক। মেয়েটির মা ছিলেন খুবই সুন্দরী। যে কারণে সঙ্গীতার চাচা বিভিন্ন সময়ে তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। এ নিয়ে পরিবারেও বেশ ঝামেলা ছিল। একদিন এসব বিষয় নিয়ে বিরোধের জের ধরে সঙ্গীতার মা ওর বাবাকে ছুরিকাঘাত করেন। ঘটনাস্থলে ওর চাচাও ছিলেন। সেসময় ক্ষিপ্ত হয়ে ওর চাচা সঙ্গীতার মাকেও মেরে ফেলেন।

এরপরে সঙ্গীতাকে তার এক পরিচিতর মাধ্যমে বেনাপোলে পাঠিয়ে দেন। সেখানে একবছর ভিক্ষা করেছে সঙ্গীতা। ওখানে একদিন ধর্ষণচেষ্টার শিকার হলে একজনকে মারধর করে। পরে ওকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেখান থেকে তাকে সামাজিক মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

নাজমুন নাহার রীণা বলেন, সঙ্গীতা আমার কাছে যা বলেছে তাতে ওর মা-বাবা খুন হয়েছে। মূলত ভারতে গেলে জানা যাবে আসলে কী ঘটনা ঘটেছে। যদি ওর মা-বাবা খুন হন, তাহলে বিচার পেতে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে তার জন্য বাংলাদেশ সরকার আমাদের সহায়তা করবে বলে আশা করি।

তিনি আরও বলেন, আমি সমাজের অসহায় মেয়েদের নিয়ে কাজ করছি কারণ, আমিও এক সময়ে অসহায় ছিলাম। আমার স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পরে দুটি সন্তান নিয়ে অসহায় অবস্থায় সংগ্রাম শুরু করি। সেইজন্য অসহায়দের কষ্ট আমি বুঝি।  

সমাজসেবা অধিদপ্তর বরিশালের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, সঙ্গীতা মণ্ডল মাদারীপুর শিশু আদালতের আদেশক্রমে ২০১৭ সালে বরিশাল সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পূর্ণবাসন কেন্দ্রে আসে। তিন বছর থেকে ওখানে কাজ শিখেছে। আদালতের নির্দেশেই ২০২০ সালে তাকে পুনর্বাসন করি স্থানীয় একটি বুটিকস হাউজে। সেখান থেকে সে চলে আসে রীণা কটন মিলসে।  

তিনি আরও বলেন, সঙ্গীতা মণ্ডলের বাড়ি ভারতে। যতদূর জানি ওর মা-বাবা মারা গেছেন। ওর আত্মীয়-স্বজন ওখানে আছেন। সঙ্গীতা ওর আত্মীয়-স্বজনের কাছে যাওয়ার জন্য খুবই কান্নাকাটি করে। আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন আর বরিশালে ভারতীয় যে ভিসা সেন্টার রয়েছে, সেখানে আলাপ করব। ও যেন ওর আপন নিবাসে ফিরে যেতে পারে সেজন্য আমি আমার সর্বাত্মক সহায়তা করব।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪
এমএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।