বরিশাল: ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত বুয়েটছাত্র নাহিয়ান আমিনের লাশ বরিশাল নগরীর নিজ বাড়িতে পৌঁছালে পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এসময় বরিশাল জিলা স্কুলের শিক্ষক এবং নাহিয়ানের সহপাঠীদের চোখ ছলছল করছিল।
এসময় নিহত নাহিয়ানের ফুফাতো ভাই বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নাভিদ নূর বলেন, নাহিয়ানকে হারানো শুধু আমাদের পরিবারের ক্ষতি নয়; একটা দেশের ক্ষতি। বরিশাল জেলার ক্ষতি।
শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুর আড়াইটায় লাশবাহী গাড়ি কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে রাখা হয়। এ সময় জিলা স্কুলের শিক্ষক এবং সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা শেষবারের মতো নাহিয়ানের মুখ দেখেন।
এরপর লাশবাহী গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় নাহিয়ানের নগরীর বাড়ি পলিটেকনিক রোডে। বাড়ির সামনে লাশবাহী গাড়ি রাখার পর নাহিয়ানের মা-বাবা, বোন এবং স্বজনেরা শেষবারের মতো তাদের সন্তান ও ভাইকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় সেখানে হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বরিশাল নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলিটেকনিক রোডের বাসিন্দা বাকপ্রতিবন্ধী বাবা রিয়াজুল আমিন বাবুর একমাত্র ছেলে নাহিয়ান আমিন হারিস। তার আরেক কন্যা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী।
বরিশাল জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমার সন্তানের চেয়েও প্রিয় ছিল নাহিয়ান। বরিশাল জিলা স্কুল শিক্ষকসহ সকলের নাহিয়ানকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল যে, নাহিয়ান জিলা স্কুলকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করবে।
নিহত নাহিয়ানের ফুফাতো ভাই ডা. নাভিদ নুর বলেন, সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার না থাকতো, সিঁড়ি চওড়া হতো, লিফট বড় থাকতো। অনেক কথাই আসবে। হায়াত নেই ঠিক আছে। হয়ত তাহলে নিচে যেতে পারতো নাহিয়ান।
বরিশাল জিলা স্কুলের গত ১০ বছরের মধ্যে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সেরা ৮/১০ জনের মধ্যে ওর নামটাও চলে আসবে জানিয়ে ডা. নাভিদ বলেন, এ ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাংলাদেশে অনেক বড় সার্ভিস দিতে পারতো। বাংলাদেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্টে কাজ করতে পারতো। বাংলাদেশের গভঃমেন্টও পেল না তাকে। আমরাও পেলাম না।
নাহিয়ান পরিবারের গর্ব ছিল জানিয়ে ডা. নাভিদ জানান, ২০২০ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে সে। ২০২২ সালে ঢাকা নটরডেম থেকে এইচএসসি পাশ করার পর বুয়েটে ভর্তি হয় নাহিয়ান। বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল সে।
রাত দেড়টার দিকে নাহিয়ানের মৃত্যুর খবর পান জানিয়ে ডা. নাভিদ বলেন, ওর শরীর পুড়েনি। আমি যেটা শুনেছি, তাতে ধারণা করছি কার্বন মনোক্সাইডের কারণে সে মারা গেছে। এতো অসাবধানতা ঠিক না, ভালো একটা ফায়ার এক্সিট থাকতো তাহলে ছেলেটা বেঁচে যেতো।
তিনি বলেন, বেইলি রোডে অনেক নামকরা রেস্টুরেন্ট আছে। দেশবরেণ্য লোকজন যায়। মানুষ সেখানে অনুষ্ঠান করে অথচ ওখানে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই। জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। বাসার বাইরে যদি আমরা নিরাপদ না হই। এটা তো কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। কোনো হোটেল অনুমোদন দেওয়ার সময় দেখা উচিত তাদের ফায়ার এক্সিট আছে কিনা। সব কিছু ঠিকমতো আছে কিনা।
এসব কঠোরভাবে দেখা জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তনি ।
পরিবার জানিয়েছে, আসর নামাজের পর বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট জামে মসজিদের সামনে নাহিয়ান আমিন হারিসের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে নগরের মুসলিম গোরস্থানে দাফন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৪
এমএস/এসএএইচ