ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদযাত্রা: মাঝ গন্তব্যের যাত্রীদের দিতে হচ্ছে শেষ গন্তব্যের ভাড়া

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৪
ঈদযাত্রা: মাঝ গন্তব্যের যাত্রীদের দিতে হচ্ছে শেষ গন্তব্যের ভাড়া

ঢাকা: ঈদুল ফিতরের বাকি আর দিন দশেক। প্রিয়জনদের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে নগরবাসী।

এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ঈদযাত্রার ট্রেন ও বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি।  

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট নিয়ে যাত্রীদের আগ্রহ ও চাপ বেশি থাকলেও ভিন্ন চিত্র বাসে। বাসের টিকিট অনলাইন ও কাউন্টারে এখনো সহজভাবেই পাওয়া যাচ্ছে।

তবে এ সহজলভ্যতা সত্ত্বেও ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের। তারা বলছেন, ঈদ ছাড়া অন্য সময়ে বাসের টিকিটের মূল্য তুলনামূলক নাগালে থাকলেও ঈদ আসতেই বরাবরের মতো সুযোগ নিচ্ছেন বাস মালিকেরা। অনেক পরিবহন বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি রাখছে টিকিটের মূল্য।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন দূরপাল্লার বাসের মাঝের গন্তব্যের যাত্রীরা। যেমন- ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা কিংবা খুলনা রুটের বাসে মধ্যবর্তী দূরত্বের যশোর কিংবা মাগুরায় নামা যাত্রীদেরও সর্বশেষ স্টপেজের ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু বছরের অন্যান্য সময়ে অতিরিক্ত এ ভাড়া তাদের দেওয়া লাগে না।

রোববার (৩১ মার্চ) বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের অগ্রিম টিকিটে সোহাগ পরিবহন যশোর পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে ৭৫০ টাকা, যদিও বছরের অন্যান্য সময়ে তারা ভাড়া নেয় ৬৫০ টাকা।

অন্যদিকে শ্যামলী ট্রাভেলস, শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস, সাতক্ষীরা লাইন, এসপি পরিবহন, কে লাইনসহ অন্যান্য বাস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় টিকিট বিক্রি করছে।  

ঈদের আগের টিকিটের জন্য বাড়তি ভাড়া চাচ্ছে অভিযোগ করে নাফিজ শাহরিয়ার নামে এক যাত্রী বলেন, যশোরে যেতে সাধারণত ৫৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকায় টিকিট পাই। কিন্তু ঈদের সময় এলে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত টিকিটের দাম চাচ্ছে। কিছু বললেই বলে, পছন্দ না হলে যেতে হবে না।  

সোহাগ পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের বুকিং সহকারী নয়ন হোসেন বলেন, এখন যারা যাচ্ছেন তাদের জন্য ৬৫০ টাকা ভাড়া। ৩ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রার বাসের টিকিট ৭৫০ টাকা।

বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্য সময় কোম্পানি ডিসকাউন্ট (ছাড়) দেয়, ঈদের সময় দেয় না।

শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের বুকিং সহকারী মোহাম্মদ হাসান আহমেদ বলেন, আমাদের টিকিট এখনো আছে। তবে টিকিটের চাহিদা ভালো। প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এখনো ঈদের চাপ শুরু হয়নি।

বর্তমান ভাড়া আর ঈদের সময়ের ভাড়া একই কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে ৫৫০ টাকায় যশোরে যাওয়া যায়। কিন্তু ৩ এপ্রিল থেকে ঈদের টিকিট নিতে গেলে ৯০০ টাকা দিতে হবে।  

ঈদের সময় ভাড়া বেশি নেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্য সময়ে ছাড়ে যেতে হয়, কিন্তু ঈদে কোম্পানি ছাড় দেয় না।  

মধ্যবর্তী দূরত্বে ভাড়া বেশি নিচ্ছেন, এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ঈদের সময় যাত্রী চাহিদা বেশি থাকে। সর্বশেষ স্টপেজের ভাড়া দিয়েই যেতে হবে।  

এ বিষয়ে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের সময় সরকারের উচিত সাধারণ যাত্রীরা যেন সাশ্রয়ী ভাড়ায় বাড়ি ফিরতে পারেন সে ব্যবস্থা করা। এই বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নেওয়ার পরিবর্তে বাস মালিকেরা যে অতিরিক্ত ভাড়া নেন সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, নিম্নআয়ের যাত্রীরা যেন সাশ্রয়ী খরচে বাড়ি ফিরতে পারে, এমন বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

অভিযোগের জবাবে যা বলছে কর্তৃপক্ষ
গাবতলী বাস কাউন্টারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণে বুথ বসিয়েছে বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। বুথের ফিল্ড সুপারভাইজার বাবুল হোসেন বলেন, অন্য সময়ে বাস মালিকেরা ছাড় দিলেও ঈদের সময় দেন না। কারণ ঈদে সবাই লাভের মুখ দেখতে চায়।

মধ্যবর্তী গন্তব্যের যাত্রীদের ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মধ্যবর্তী যাত্রীদের নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। বাসের রুট অনুযায়ী তাদের সর্বশেষ দূরত্বের ভাড়াই দিতে হবে।  

কাউন্টারে চাপ কম, টিকিট বিক্রি বেশি অনলাইনে
যাত্রীদের কাউন্টারে চাপ কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে সাতক্ষীরা লাইনের কাউন্টার সহকারী তানজিল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন গাবতলীতে খুব বেশি চাপ নেই। এখনো সিট খালি যাচ্ছে, তবে ঈদের চাপ শুরু হলে যাত্রীর ভিড় বাড়বে।

কাউন্টারে চাপ কম থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের টিকিট নিজেদের পরিবহনের অনলাইনে বিক্রি হয় আবার সহজ ডটকমেও বিক্রি হচ্ছে। এজন্য টিকিট কাটতে কাউন্টারে আসছেন কম যাত্রী।

টিকিট সেবার প্লাটফর্ম সহজ ডটকমের পরিচালক শাকিল জাওয়াদ রাহিম বাংলানিউজকে বলেন, বাস কোম্পানিগুলো আমাদের ২০-৩০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রির জন্য দিয়ে থাকে। তবে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট রুটের শতভাগ অনলাইনে পাওয়া যায়। এরই মধ্যে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট অধিকাংশ বিক্রি হয়ে গেছে।  

অজনপ্রিয় বাসগুলোর টার্গেট নিম্ন আয়ের যাত্রী 
পরিচিত বাস কোম্পানিগুলোর অনলাইনে ও কাউন্টারে প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে অজনপ্রিয় বাসগুলোর এখনো অনেক টিকিট অবিক্রিত রয়ে গেছে। এসব বাস ঈদের আগে ছুটি পাওয়া বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিক ও অন্য স্বল্প আয়ের যাত্রীর অপেক্ষায় আছে।  

পরিচিত বাসগুলোর অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরুতেই বিক্রি হয়ে যাওয়ায় এসব কাউন্টারের কর্মীদের এখন আর কোনো ব্যস্ততা নেই। ঈদের আগ পর্যন্ত তেমন কাজের চাপ থাকবে না বলে জানান তারা।  

অন্যদিকে অজনপ্রিয় বাসগুলোর কাউন্টারের কর্মীরা যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছেন।  

এরকমই একটি কোম্পানি ‘দক্ষিণ বাংলা পরিবহন’। পরিবহনটির চেয়ারম্যান সোহাগ মৃধা বলেন, আমাদের ধরা যাত্রী কম। ঈদের আগে যারা ছুটি পান তারা আসেন, নগদে টিকিট কিনে নগদে চলে যান। আমাদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি কম।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৪
এনবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।