নীলফামারী: প্রকৃতিতে প্রচণ্ড গরম, হাঁসফাঁস জীবন। মাঠে-ঘাটে বাড়িতে কোথাও শান্তি নেই।
এমন গরমে ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এর ফলে এসি আর ফ্যানের সুবিধা ভোগকারীরাও নেই শান্তিতে। সম্ভাব্য ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে নীলফামারী জেলা তথ্য অফিস সড়কে প্রচারণা শুরু করেছে।
জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সদর ও সৈয়দপুর উপজেলার সর্বত্র এই চিত্র মিলেছে। গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কর্মজীবীরা বাইরে বের হতে পারছেন না। দিনমজুর, রিকশা চালক, ঠেলাচালক দিনহাজিরা লোকজন একটু পরপরই ছায়ায় গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
দিনের প্রথম প্রহরে কাজ সেরে নিচ্ছেন অনেকেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।
এই গরমে শরবতের চাহিদা বেড়েছে। বেল, পাঁকা পেঁপে ও দইয়ের শরবত বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। সেই সঙ্গে বেড়েছে আইসক্রিমের চাহিদাও। বাজারে একটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।
খরায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ ও খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে পানির স্তর নিচে নামায় সেচযন্ত্রে প্রয়োজনীয় পানি উঠছে না। ফলে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
জেলার সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, একেতো সেচযন্ত্রে পানি উঠছে না। তার ওপর বিদ্যুৎ থাকছে না। এসব সমস্যায় বড় চিন্তায় আছি।
সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের দলুয়া চৌধুরীপাড়ার মুদি দোকানদার মশিউর রহমান জানান, প্রায় এক মাস ধরে আমাদের বাড়ির নলকূপে পানি কম উঠছে। এতে নলকূপ চাপতে চাপতে হয়রান হয়ে যাচ্ছি। তাই বাড়ির পানির চাহিদা পূরণে কষ্ট হওয়ায় সে নলকূপটি উঠিয়ে বাড়ির কাছে অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে স্থানান্তর করেছি। কিন্ত তাতেও তেমন কাজ হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ির কাছে বোরো স্কিমের শ্যালো মেশিনে যেতে হচ্ছে। আর এ অবস্থা শুধু আমাদের না, আশেপাশের গ্রামেও।
সৈয়দপুরের বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর চড়কপাড়ার সাইদুর কোরাণী জানান, নলকূপে কোনো পানিই উঠছে না। ফলে গোসল, বাথরুম ব্যবহারে অনেক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। তারপর ধার দেনা করে সাবমার্সল মটরসহ নলকূপ বসিয়েছি। এতে ১৬০ ফিট গভীরতায় পাইপ ও নিচে মটর বসিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে নারী-পুরুষ খাবার পানি সংগ্রহ করছেন গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আফরোজা সিমু জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর গরমের তীব্রতা বেড়েছে। এ জন্য রোগীর চাপও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ডাইরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। কেউ কেউ মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিলেও শয্যা সংকটের কারণে সব রোগী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, গরমের তীব্রতা বাড়লে হিট ষ্ট্রোক হতে পারে। এ জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। একই হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ওয়াসিম বারি জয় বলেন, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে যেভাবে গরম পড়েছে, তাতে শিশুদের অবস্থা কাহিল। তীব্র গরমে শিশুদের প্রথমে জ্বর, এরপর ডাইরিয়া হচ্ছে।
সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা লোকমান হাকিম জানান, গত কয়েকদিন থেকে এই জনপদে ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠানামা করছে। এই তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে। এ সময় সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
এফআর