ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে প্রবেশের মুখে সব সময় জটলা লেগেই থাকে। এর প্রধান কারণ অবৈধ দোকানগুলো ফুটপাতসহ যান চলাচলের সড়কের অর্ধেক জায়গা দখল করে পসরা সাজিয়ে বসে থাকে।
এছাড়া অনেকেই বলছে, এসব দোকানে মাদকাসক্তরা সারারাত বসে আড্ডা দেয়। সময় সুযোগ পেলেই হাসপাতালের ভেতর থেকে রোগীদের নানা রকম জিনিস চুরি করে থাকে।
শনিবার (১১ মে) সারাদিন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশের প্রধান ফটকের সামনে এইসব অবৈধ দোকানের চিত্র দেখা যায়।
সড়ক থেকে জরুরি বিভাগের ঢোকার প্রধান ফটকের দুই পাশে হাসপাতালের দেয়াল সংলগ্ন ফুটপাত ও সড়কসহ বড় ছোট আনুমানিক শতাধিকের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে মাদুর, বালিশ, কাঁথা, কম্বল, থালা, গ্লাস, বালতি, মগ; ফল, চা, পান, সিগারেট, ডিম, ব্যাগ, জুতা, হাতপাখা, ছোট বৈদ্যুতিক পাখা বিক্রি করতে দেখা যায়। পাশাপাশি তিন চাকার ভ্যানে শরবতের ও ডাব বিক্রি করতে দেখা যায়। এর মধ্যে সড়কের অর্ধেক অংশ জুড়ে আছে ভাতের হোটেল। এইসব অবৈধ দোকানের কারণে সড়কের একপাশে প্রায় সময় যানজট লেগেই থাকে।
হাসপাতালে প্রবেশ মুখের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে যারা বর্তমানে ব্যবসা করছে তাদের মধ্যে থেকে অনেকে জানান, কারো কারো দোকান আছে ৪০ বছর যাবত। তারা এই ফুটপাতে ও সড়কের দোকানদারি করে ছেলে মেয়েদের কোনো মতে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে-শাদীও দিয়েছেন।
বর্তমানে এখন তাদের নাতিরাও এই দোকানগুলো চালাচ্ছেন। কয়েকজন দোকানি নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক বলে জানান, মাঝে মধ্যে এখানে উচ্ছেদ অভিযান হয়। উচ্ছেদের আগে মাঝে মাঝে আমরা অগ্রিম সংবাদ পেয়ে যাই আবার মাঝে মাঝে সংবাদ পাওয়া যায় না। অগ্রিম সংবাদ পেলে আগেই দোকান সরিয়ে রাখে দোকানিরা।
ঘণ্টাখানেক মধ্যে অভিযান চলে যাওয়ার পরপরই পুনরায় সবাই নির্ধারিত জায়গায় দোকান সাজিয়ে বসে পড়ি। এছাড়া প্রতিদিন প্রতি দোকান থেকে লোকজন টাকা তুলে থাকে। এই টাকা তোলার কয়েকটি কারণ মধ্যে একটি কারণ হল, দোকানগুলোর লাইন মেইনটেইন করা।
জরুরি বিভাগ সংলগ্ন সড়ক ও ফুটপাতসহ শহীদ মিনার পর্যন্ত যে-সব দোকান আছে এসব দোকান থেকে টাকা উঠিয়ে থাকেন জলিল ও আকরাম নামে দুই ব্যক্তি। তারা টাকা উঠিয়ে কাদের ভাগ দেয়, এই বিষয়গুলো জানাতে পারেনি ফুটপাতের দোকানিরা। তবে প্রতি দোকান থেকে প্রতিদিন দেড়শ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলা হয়।
এছাড়া ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনে (বকশিবাজার) (ডিএমসিএইচ–২) ঢোকার রাস্তায় আরও কিছু দোকান আছে। এসব দোকানের কারণেও জরুরি বিভাগের মত হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি সহজে ঢুকতে বা বের হতে পারে না। পাশাপাশি হাসপাতাল পুরো চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বিভিন্ন হকাররা। তারা হাসপাতালের আনসার সদস্যদের সামনেও কেউ ঝাল মুড়ি, বেলপুরি, খেলনা, কেউবা জামা কাপড় বিক্রি করছে।
হাসপাতাল থেকে একটু সূত্র জানান, পুরো হাসপাতাল জুড়ে বাইরে ভেতরে সিসি ক্যামেরা আছে। কর্তৃপক্ষ সবসময় এগুলো দেখতে পায়। হাসপাতাল প্রশাসন কেন নীরব থাকে এটা তারাই ভালো বলতে পারবে।
অপর এক সূত্র জানান, এইসব ফুটপাতের দোকানে রাত্রে বেলায় মাদকাসক্তরা মানে ভবঘুরে তারা বসে আড্ডা দেয়, চা পান করে। তারা যখনই সুযোগ পায় হাসপাতালে ঢুকে রোগী স্বজনদের বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে থাকে।
এই বিষয়ে হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া বলেন, হাসপাতাল কেন্দ্রিক অবৈধ দোকান গুলো দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে বারবার উচ্ছেদ করা হলেও কিছুক্ষণ পরে তারা আবার বসে পড়ে। হাসপাতালে প্রবেশের প্রধান ফটকে জটলার কারণে রোগীদের প্রবেশ করতে মাঝে মাঝে বেগ পেতে হয়।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এই সমস্যাটি অনেক পুরোনো আমার আগেও যারা পরিচালকরা ছিলেন তারাও ফেস করেছেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত রোজায় হাসপাতালে প্রবেশের প্রধান ফটকের আশেপাশে অবৈধ দোকানদের বসতে দেওয়া হয়নি। আমাদের হাসপাতালের আনসাররা সারাক্ষণ মনিটরিং করেছে। এখন আবার দিনে কম থাকলেও রাতে দোকানেদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায় বলে জানতে পেরেছি।
এই বিষয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা একটা চিঠিও দিয়েছি। শীঘ্রই কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এছাড়া আমাদের ম্যানেজিং কমিটির মিটিং হবে সেখানে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে। আমরা একটি স্থায়ী সমাধান বের করার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৪
এজেডএস/এসএম