ঢাকা: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রায় ৬৭ শতাংশই ব্যবসায়ী। কোটিপতি প্রার্থী রয়েছেন ১০৬ জন।
কোটিপতি প্রার্থীদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৯০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন কোটিপতি রয়েছেন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের তথ্য (হলফনামার ভিত্তিতে) বিশ্লেষণ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সোমবার (২৭ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশ্লেষণে উঠে আসা তথ্য ও পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে সংস্থাটি।
টিআইবি বলেছে, প্রার্থীদের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতে কোটিপতির হিসাব করা হয়েছে। ভূমির মতো স্থাবর সম্পদের মূল্য নির্ধারণ কঠিন হওয়ায়, তা কোটিপতির হিসাবে আনা হয়নি।
টিআইবির বিশ্লেষণে দেখা যায়, তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশই নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষিকাজ। পেশার ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আইন পেশা (৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ) ও শিক্ষকতা (৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ)।
একই ভাবে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদেরও ৬৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ নিজেদের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ গৃহিণী, গৃহস্থালির কাজকে তারা পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের প্রায় ৩২ শতাংশ পেশায় ব্যবসায়ী।
২১ মে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ৭১ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি ছিলেন ১০৫ জন। এর আগে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় আসছেন কি না এবং মুনাফা করার উদ্দেশ্যে আসছেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। তথ্য বলছে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতায় থাকলে অনেকের আয় ও সম্পদ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ফলে জনস্বার্থের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। অন্যদিকে কৃষিজীবী ও শিক্ষকতায় যুক্ত প্রার্থীদের সংখ্যা কমছে।
অস্থাবর সম্পদের শীর্ষে শিবপুরের ফেরদৌসী
প্রার্থীদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদের তালিকার শীর্ষে আছেন নরসিংদীর শিবপুরের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌসী ইসলাম। তার মোট অস্থাবর সম্পদ ১৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। তিনি সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী।
তালিকার ২ নম্বরে আছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর জাহেদুল হক, তার সম্পদ ৩১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে আছেন ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার প্রার্থী মোখলেছুর রহমান। তার অস্থাবর সম্পদের মূল্য ১৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
আইনি সীমার বেশি জমি ৬ প্রার্থীর
জমির মালিকানার দিক দিয়ে আইনি সীমা অতিক্রম করেছেন ৬ জন প্রার্থী। আইন অনুযায়ী, একজন নাগরিক সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা বা ৩৩ একর জমির মালিক হতে পারেন। টিআইবির তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেওয়ান আশিদ রাজা চৌধুরীর মোট জমির পরিমাণ ২৮০ একর। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের রেজাউল করিমের জমির পরিমাণ ২৬৭ দশমিক শূন্য ৬ একর। নওগাঁর রানীনগর উপজেলার রাহিদ সরদারের জমির পরিমাণ ৬৫ দশমিক ৩৬ একর।
সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে কক্সবাজারের নুরুল আলমের
২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় আয় বৃদ্ধির দিক দিয়ে সবার ওপরে কক্সবাজারের টেকনাফের চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আলমের। তার আয় বেড়েছে ১০৪ গুণ। ১০ গুণের বেশি আয় বেড়েছে আরও ৫ প্রার্থীর। তাদের দুজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও তিনজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।
সবচেয়ে বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে দেলদুয়ারের মাহমুদুলের
অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাহমুদুল হাসানের। তার সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ৯৮ গুণ। ১০ গুণের বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে আরও ৯ জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
এনবি/এমজেএফ