ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সাভারের ট্যানারিতে সংরক্ষণ হবে ৬ লাখ চামড়া, পর্যাপ্ত লবণও মজুদ

অতিথি করেসপন্ডেন্ট, সাভার (ঢাকা) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৪
সাভারের ট্যানারিতে সংরক্ষণ হবে ৬ লাখ চামড়া, পর্যাপ্ত লবণও মজুদ

ঢাকা: দেশের অন্য কোনো জেলা থেকে আগামী সাত দিন কোরবানি করা পশুর চামড়া ঢাকায় ঢুকবে না। কেননা, প্রায় ১২ লাখ পশুর চামড়া রয়েছে ঢাকার অভ্যন্তরে।

এর মধ্যে ছয় লাখ ঢুকবে সাভারের ট্যানারি; বাকিগুলো চলে যাবে পোস্তায়।

সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহার দিন বিকেল ৪টার মধ্যেই সাভারের ট্যানারিতে প্রায় ৪০ হাজার পিছ চামড়া ঢুকেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়েছে। ঢাকার আশপাশ থেকেও এ ট্যানারিতে চামড়া আসা শুরু হয়েছে। সন্ধ্যায় বিসিক শিল্প নগরীর ট্যানারিতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

ট্যানারি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানী ও ঢাকার আশপাশ থেকে পুরো দমে চামড়া আসা শুরু হয়েছে। মালিক ও আড়ৎদাররা সেগেুলো কিনে নিচ্ছেন।

বিসিকের আজমেরী ট্যানারির মালিক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, আমরা সে দামেই চামড়া কিনছি। সরকার লবণনযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা লবণ ছাড়া চামড়া ক্রয় করছি। আমরা যখন হাটে ঘাটে যাব তখন সরকার নির্ধারিত দরেই চামড়া কিনবো। আজ লবণ ছাড়া চামড়া আসছে। এসব চামড়ায় লবণ দিতে হয়। এখানে লেবার খরচ ও লবণের খরচ আছে। সব মিলিয়ে চামড়া প্রতি দুই থেকে ২৫০ টাকা খরচ হয়। এই দামটিই আমরা কম রাখছি। আমার আড়তে আজ ৮ হাজার পিছ চামড়া কেনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার কোরবানির চামড়া ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১০ হাজার। এ বছর আমি ১ লাখ পিছ চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সব ধরনের চামড়া কিনবো; তবে সেটি ধাপে ধাপে। চামড়া ব্যবসায় বর্তমানে সিন্ডিকেট নাই। মাদরাসার লোকজনের কাছ থেকে আমরা চামড়া কিনছি। সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নাই।

চামড়ার আড়ৎদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কাঁচা চামড়া কেনার পর লবণ দিতেই আমাদের এখানে আড়তগুলো গড়ে উঠেছে। আমরা সব আড়ৎদার মিলে প্রায় ৫-৬ লাখ চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। আমাদের সব কিছুই প্রস্তুত আছে। যদি সঠিকভাবে পাই, ৫-৬ লাখ চামড়ায় লবণ দিয়ে রাখতে পারব। বিকেলে কিছু চামড়া এসেছে। সন্ধ্যার পর থেকে ব্যাপকভাবে আসতে শুরু হয়। সরকার নির্ধারিত দামে আমরা চামড়া কিনলেও বিক্রির সময় আমরা সঠিক মূল্য পাই না। এখানে আমাদের একটা দুঃখ রয়েছে। বর্তমানে সব দিকের খরচ বেড়ে গেছে। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারলে আমাদের খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভ থাকতো।

চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট সম্পর্কে তিনি বলেন, এখনও আমরা সিন্ডিকেটের কোনো আলামত দেখছি না। আমি নিজে ৫০-৬০ হাজার চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির মালিক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, দুপুর থেকে কাঁচা চামড়া ট্যানারিতে ঢুকছে। ঈদের প্রথম দুদিন প্রায় ৫ লাখ পিস চামড়া শিল্প নগরীতে ঢুকবে।

সাভারের হেমায়েতপুরের হরিনধারা এলাকার বিসিক শিল্পনগরী ট্যানারির চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, বিসিক ও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নিয়ে সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) প্রস্তুত করা হয়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় সাভারে সিইটিপি বর্তমানে অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। ব্লোয়ার ছয়টির জায়গায় ১৭টি সচল। ট্যানারির ভেতর দুটি বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য পুকুর করা হয়েছে। একটি শতভাগ ও একটির ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সাভার ট্যানারি ৬ লাখ চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, দেশের অন্য জেলা থেকে চামড়া সাত দিন ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। আমাদের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া এতিমখানা ও মাদরাসায় সংগ্রহ করা চামড়ার জন্য বিনা মূল্যে লবণ দেওয়া হয়েছে। তাদের কাজ শুধু ৬ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা। একটা হিসাব করেছি, প্রায় ১২ লাখ নতুন চামড়া ঢাকার ভেতর রয়েছে। ৬ লাখ সাভারের ট্যানারি ও বাকীগুলো ঢাকার পোস্তায় সংরক্ষণ করা হবে। এছাড়া কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য ঢাকার হাজারীবাগেও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় সাভার, আমিনবাজার ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেজন্য পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রাখা হয়েছে। লবণের দাম যেন বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার পর্যবেক্ষণ করছে। সারা বাংলাদেশে মনিটরিং টিম রয়েছে। এখন পর্যন্ত লবণের কোনো ঘাটতি হয়নি।

সঞ্জয় কুমার আরও বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি এক লাখ মেট্রিক টন লবণ লাগবে, সেখানে আমাদের ১ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন মজুদ রয়েছে। লবণের মূল্য গতবারে তুলনায় দুই টাকা কম। এটি ঠিক করতে প্রশাসনের সবাই কাজ করছে। এখন পর্যন্ত সব ধরনের প্রস্তুতি সফল।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৮ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৪
এমজে

 
 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।