ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘লিঙ্গ ভেদাভেদ ভুলে দেশের ভূখণ্ড রক্ষাই মূল মন্ত্র’ 

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৪
‘লিঙ্গ ভেদাভেদ ভুলে দেশের ভূখণ্ড রক্ষাই মূল মন্ত্র’  সিপাহী ছাবাতুন উল্লাহ জীম

চট্টগ্রাম সাতকানিয়া থেকে ফিরে: 'নারীদের কখনো পিছিয়ে থাকার কারণ নেই। আমি নারী-পুরুষকে আলাদা দৃষ্টি ভঙ্গিতে কখনো দেখিনি।

আমরা সবাই মানুষ। কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে একজন মানুষ সফলতা শিখরে পৌঁছাতে পারে। এখানে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ করে কাজ নেই। আমি একজন সৈনিক দেশ ও দেশের ভূখণ্ড রক্ষাই আমার মূল মন্ত্র। '

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিজিবি'র ১০১ তম রিক্রুট ব্যাচের আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন সিপাহি জীম।  

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি'র ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিক সিপাহী ছাবাতুন উল্লাহ জীম (বক্ষ নম্বর-৭১৬)। তিনি সর্বমোট ৫৫৬ জনের মধ্যে সর্ব বিষয়ে তৃতীয় ও শারীরিক উৎকর্ষতা (মহিলা) বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।  

সিপাহি ছাবাতুন উল্লাহ জীমের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানা এলাকায়। জীম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি কলেজের অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পরিবারে তার বাবা-মা ও বড় ভাই রয়েছেন।  

বিজিবির সিপাহি হওয়র জন্য পরিবারের কাছ থেকেই সর্বপ্রথম তিনি উৎসাহ পেয়েছেন। এটাই তার সর্ব বিষয়ে ৩য় ও শারীরিক উৎকর্ষতা (মহিলা) বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করার জন্য প্রেরণা হিসেবে সহযোগিতা করেছে বলে যোগ করেন জীম।  

সিপাহি ছাবাতুন উল্লাহ জীম বলেন, ট্রেনিংয়ে এসে আমি চেষ্টা করেছি আমার সর্বোচ্চ পরিশ্রম ও মেধাকে কাজে লাগাতে। আমি সেটাই করেছি৷ ডিফেন্স বাহিনীর প্রতি আমার প্রথম থেকেই একটু টান ছিল। ডিফেন্স এর রুলসগুলো আমার ভালো লাগতো। আমি নিজেও সব সময় রুটিনের মধ্যে চলাফেরা করতে পছন্দ করতাম।  

তিনি বলেন, ট্রেনিং সেন্টারে এসে আমি অনেক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। সব সময় ভাবতাম আমি একজন নারী বলে আমার পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই, আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আর এ কারণেই আমি নবীন সৈনিকদের মধ্যে সেরা তৃতীয় স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছি।

এটি শুধু আমার একার পরিশ্রমের ফল নয় উল্লেখ করে সিপাহি জীম বলেন, এখানে আমাদের স্যারেরা ও ওস্তাদজীরা আমাকে অনেক সহযোগীতা করেছেন। তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।

প্রশিক্ষণে এসে যখন ফায়ারিংএ অংশগ্রহণ করেছেন, তখন আপনার ভয় করেনি? প্রশ্নের জবাবে নবীন এ সাহসী নারী সৈনিক বলেন, ফায়ারিং প্রশিক্ষণের শুরুতেই আমাদের ওস্তাদজীরা বলেছিলেন, এখানে কোনো ভয় নেই, আর ভয়কে অবশ্যই জয় করতে হবে। তাদের এ কথা শুনে আমি অনেক সাহস পেয়েছি। তখন আমার মনে হয়েছে এখানে আমার সঙ্গে আরও ৫৫৬ জন ছেলে-মেয়ে প্রশিক্ষণে এসেছেন। ওদের কিছু হলে আমারও হোক। কারণ আমি দেশের জন্য কাজ করতে এসেছি। জীবন দিতে হলেও দেশের জন্যই জীবন দিব। যখন আমি বিজিবিতে ভর্তি হয়েছি, তখন থেকেই আমি মনে করি আমার জীবন দেশের জন্য উৎসর্গ করেছি।  

সীমান্তে আমি সৈনিক হিসেবে কাজ করার সময় সীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে আমি রুখে দাঁড়াব। আমার সর্বশক্তি দিয়ে এ দেশ ও দেশের ভূখণ্ডের রক্ষা করবো।  

সর্ববিষয়ে সেরা হলেন সিপাহি রাফি:

বিজিবি'র ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের সর্ববিষয়ে সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৩০৬ রিক্রুট (জিডি) মো. মিনহাজ হোসেন রাফি। সর্বমোট ৫৫৬ জন রিক্রুটের মধ্যে তিনি সর্ব বিষয়ে সেরা ও প্রথম স্থান অর্জন করেন।  

নাটোরের সিংড়া থানার শেরকোল ইউনিয়ন পাচপোতা গ্রামে রাফি পরিবার বসবাস করেন। নাটোরের সিংড়া গোল-ই-আফরোজ সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাফি। বাবার মৃত্যুর পর রাফির পরিবারে মা ও তার এক ছোট বোন রয়েছেন।

সিপাহি মো. মিনহাজ হোসেন রাফি বলেন, আমি যখন ট্রেনিং সেন্টারে আসি তখন দেখেছি, ট্রেনিং সেন্টারে লেখা ছিলো- "কঠোর প্রশিক্ষণ নিরাপদ সীমান্ত"।

'মনে মনে আমি ঠিক করে নিলাম, প্রতিটি প্রশিক্ষণ খুব যত্নসহকারে ও সুন্দরভাবে গ্রহণ করবো। নীরব সীমান্তকে নিরাপদ রাখবো। কারণ সীমান্ত রক্ষা ও নিরাপদ রাখাই আমরা প্রধান দায়িত্ব। '

তিনি বলেন, আমি মনোযোগ সহকারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি, সব কিছুই সঠিকভাবে পালন করা চেষ্টা করেছি। যারা আমার প্রশিক্ষক ছিলেন, ওস্তাদজী স্যারেরা ছিলেন তারা আমাকে সুন্দরভাবেই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাদের সহযোগিতায় আমি প্রশিক্ষণ শেষ করতে পেরেছি। প্রশিক্ষক, স্যার ও ওস্তাদজীদের শিক্ষায় আমি রিক্রুট ব্যাচের সবার মধ্যে সর্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পেরেছি৷ 

এখন আমার একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা করা। সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে চোরাচালানসহ সব ধরনের অপরাধ বন্ধে কাজ করা- যোগ করেন সিপাহি রাফি।

বিজিবি’র ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-তে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৫৫৬ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫২০ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-এর বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী নবীন ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের সর্ববিষয়ে সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৩০৬ রিক্রুট (জিডি) মো. মিনহাজ হোসেন রাফি, শারীরিক উৎকর্ষতা (পুরুষ) প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৬৩২ সিপাহী আবু হুরায়রা ও সর্ব বিষয়ে তৃতীয় ও শারীরিক উৎকর্ষতা (মহিলা) বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৭১৬ সিপাহী ছাবাতুন উল্লাহ জীম এবং ফায়ারিং-এ শ্রেষ্ঠ রিক্রুট বক্ষ নম্বর-৬৪১ সিপাহী মো. শাহিন উদ্দিনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকসদল কর্তৃক বিজিবি মহাপরিচালককে আবারও সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৪
এসজেএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।