ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্রান্ডের অবৈধ চোরাই অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ফিচার ফোনসহ চোরাচালান চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
মোবাইল চোরাকারবারী চক্রের গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন, মূলহোতা আবু তাহের, মেহেদী হাসান (২২), রুবেল হোসেন ও নূর নবী।
রোববার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফয়জুল ইসলাম বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, শনিবার (২৯ জুন) রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিরা কুমিল্লা-ঢাকা রুটের চোরাই চক্রের সদস্য। গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে ভারত থেকে কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ মোবাইলফোন বাংলাদেশে এনে তা কম দামে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের কাছে বিক্রয়কারী একটি মোবাইল চোরাকারবারীর চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা জানায়, চক্রের সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে চোরাইপথে কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতীয় কারখানায় তৈরি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইলফোন চোরাকারবারীর মাধ্যমে কুমিল্লা-ঢাকা রুট ব্যবহার করে রাজধানীতে নিয়ে আসে। মূলত সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কারণে অধিক লাভের আশায় গ্রাহকের কাছে কম দামে বিক্রয় করা হয়। ফলে বাজারে এসব মোবাইলফোনের অনেক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও এসব ফোনের আইমইআই নম্বর বিটিআরসির নথিভুক্ত না থাকায় অপরাধীরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য চোরাইপথে আসা ভারতীয় এ ধরনের মোবাইল ব্যবহার করে থাকে। গ্রেপ্তার আসামিরা আরও জানায়, চোরাইপথে আনা এসব মোবাইলফোন তারা রাজধানীর বিভিন্ন মোবাইল বিক্রয়কারী মার্কেটে সরবরাহ করত।
গ্রেপ্তার আবু তাহের ভারত থেকে ফোন চোরাকারবারী এই চক্রটির মূলহোতা। তাহের গত তিন বছর আগে কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকায় একটি মোবাইল শো-রুমে বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি শুরু করে। তখন থেকেই কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত পথে অবৈধভাবে সংঘবদ্ধ মোবাইল চোরাকারবারী চক্রের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। একপর্যায়ে মোবাইলের শো-রুমে চাকরির পাশাপাশি সে নিজেও এসব ভারতীয় ব্রান্ডের চোরাই মোবাইলের চালান আনিয়ে কুমিল্লাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে সরবরাহ করতে শুরু করে। অল্প সময়ে অধিক অর্থ লাভের আশায় এবং তার এই অপরাধ কর্মকাণ্ডটি বিস্তৃত করতে সে নিজেই একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলে। তার নেতৃত্বে চক্রটি কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে গত দেড় মাসে এ ধরনের পাঁচটি বড় চালান ঢাকায় সরবরাহ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তার মেহেদী এই চক্রটির মূলহোতা আবু তাহেরের অন্যতম সহযোগী। সে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের বাসিন্দা। তার এক পরিচিত ভাইয়ের মাধ্যমে চোরাইপথে মোবাইল আমদানির চক্রে তাহেরের সাথে জড়িয়েছে বলে জানা যায়। গত দেড় মাসে সে তাহেরের সাথে মিলে ৫টি বড় চালান নির্বিঘ্নে ঢাকায় সরবরাহ করেছে। তার দাবি, সে কুমিল্লা সদরের সাজ্জাদ ওরফে শাকিলের বেতনভুক্ত কর্মচারী, তবে তার এই দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
গ্রেপ্তার রুবেল একজন গাড়ি চালক। প্রথমে সে রেন্ট-এ-কার এর গাড়ি ভাড়ায় চালালেও পরে তাহের এর চক্রে যোগ দেওয়ার পরে তাহের তাকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়ায় চালাতে দেয়। সে ওই প্রাইভেটকারটি চালানোর আড়ালে চোরাইপথে আসা মোবাইলগুলো তাহেরের নির্দেশে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহের কাজ করে থাকে।
এছাড়াও গ্রেপ্তার নূরনবী ফেনী জেলার মহিপাল এলাকার টিটু চৌধুরীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করত। তাহেরের সাথে পরিচয়ের পর অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের আশায় সে চোরাই মোবাইল ফোন পরিবহনের এই চক্রের প্রস্তাবে রাজি হয় এবং তাহেরের নির্দেশে বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনের চালান বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করে।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২৪
এসজেএ/এএটি