ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেনসহ ছয় উদ্যান ও ইকোপার্কের প্রবেশমূল্য কয়েকগুণ বাড়ানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
শুক্রবার (৫ জুলাই) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এ উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, উদ্যান-পার্কে সার্বজনীন ও অবাধ প্রবেশাধিকারের রাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে প্রবেশমূল্য কয়েকগুণ বাড়ানোর ঘটনাটি বৈসাদৃশ্যপূর্ণ এবং জনগণের বিনোদন ও জনস্বাস্থ্য সুবিধাদির সার্বজনীন ধারণার প্রতি বৈষম্যমূলক। ফলে মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন (জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান), রাজধানীর বলধা গার্ডেন, কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্ক এবং ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করতে হবে।
উদ্যান-পার্কে সকল আয় ও শ্রেণিপেশার মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে প্রবেশমূল্যর অযাচিত মূল্য বৃদ্ধি অবিলম্বে বন্ধ করে জনসাধারণের জন্য যৌক্তিক প্রবেশমূল্য নির্ধারণের জোর দাবি জানাচ্ছে আইপিডি।
আধুনিক নগর পরিকল্পনায় উদ্যান-পার্ক-খেলার মাঠকে বিনোদন সুবিধাদি বিবেচনার সাথে সাথে স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে সব শহরে যথাযথ পরিমাণ উদ্যান-পার্ক-খেলার মাঠ থাকে এবং জনগণের সেখানে অবাধ প্রবেশাধিকার আছে, সেই শহরের অধিবাসীদের জনস্বাস্থ্য তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে। ফলে নগরের হাসপাতাল-ক্লিনিক প্রভৃতি স্বাস্থ্য অবকাঠামোয় চাপ পড়ে কম।
আমাদের স্মরণ রাখা দরকার - আমাদের সংবিধানের ১৫ ধারায় বিনোদনকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং ১৭ ধারায় জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে রাষ্ট্রকে। একইসঙ্গে সংবিধানের ১৯ ধারায় রাষ্ট্রকে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে বলা হয়েছে।
এতৎসত্ত্বেও বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি পার্ক-উদ্যান-খেলার মাঠে সাধারণ জনসাধারণের প্রবেশাধিকার ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে। পার্ক-উদ্যানসহ বিভিন্ন গণপরিসরসমূহকে ইজারা দেবার নামে গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে।
পার্ক-উদ্যান-খেলার মাঠসমূহকে পুনঃউন্নয়নের নামে মাত্রাতিরিক্ত কংক্রিটের ব্যবহার করে উদ্যানের চরিত্রকে ধ্বংস করে, এমন নকশা প্রণয়ন করে উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা গত ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ইজারামূল্য বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করবার কারণে অনেক পার্ক-উদ্যান-ইকোপার্কে সাধারণ ও নিম্নবিত্ত মানুষের নিয়মিত প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
দাবি জানিয়ে আইপিডি বলছে, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ অন্যান্য উদ্যান ও ইকোপার্কগুলো আমাদের শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী -গবেষকসহ সকলের জন্যই প্রকৃতিকে জানবার ও প্রকৃতি থেকে শেখবার জন্য উন্মুক্ত বিদ্যালয়। ফলে এই সকল উদ্যানের প্রবেশমূল্য যেন সকলের জন্য সাশ্রয়ী হয়, সেই বিবেচনাটিই প্রাধান্য পাওয়া উচিত বলে মনে করে আইপিডি। একইসঙ্গে উদ্যান-পার্কে প্রবেশের সময়সীমাকে সংকোচনের ও কমানোর সুযোগ নেই। এসডিজি প্রতিশ্রুত অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর ও জনবসতি গড়তে উদ্যান-ইকোপার্ক হতে কোনো ধরনের মুনাফা লাভের আকাঙ্ক্ষা রাষ্ট্রের থাকা উচিত নয় বলে মনে করে আইপিডি। সংবিধানে প্রতিশ্রুত সুযোগের সমতা এবং বিনোদন ও জনস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে উদ্যান-ইকোপার্কের অতিরিক্ত প্রবেশমূল্য কমানো উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২৪
এনবি/এসএএইচ