ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নরসিংদীতে বোনের সামনে ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৪
নরসিংদীতে বোনের সামনে ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

নরসিংদী: নরসিংদীর শিবপুরে বোনের সামেনে ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

রোববার (৭ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় উপজেলা সদরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় আতঙ্কে বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। ঘটনার পর প্রকাশ্যে বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। অথচ থানা থেকে কয়েকশ গজ দূরে দিনে-দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকের নাম মারুফ মিয়া (২২)। তিনি উপজেলার সৈয়দেরগাঁও এলাকার মৃত মোশাররফ মিয়ার ছেলে।


পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শিবপুরে আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই কিশোর গ্যাং আলী ও সৈকত গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সৈকত গ্রুপের প্রধান সৈকত আহত হয়। এ ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলায় আলী গ্রুপের মারুফ মিয়া ছিল ২ নম্বর আসামি। রোববার সকালে মারুফ সদর সড়কের ধিরা ঘোষের বাড়িতে অবস্থান করছে এমন সংবাদে সৈকত গ্রুপের সদস্যরা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ সেখানে গিয়ে মারুফকে না পেয়ে ফিরে আসে। পরে সৈকত গ্রুপের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে সেই বাড়িতে হানা দিয়ে মারুফকে খোঁজে পায়। তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে নিহতের স্বজনরা ঘটনাস্থল থেকে মারুফকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে  চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ট্রেচারে মারুফের লাশ। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। মারুফের লাশের সামনে কাঁদছেন স্বজনরা।

নিহতের বোন বৃষ্টি বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার মোবাইলে খবর আসে মারুককে সৈকতের লোক আটকে কোপাচ্ছে। আমি দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখি তারা আমার ভাইকে কোপাচ্ছে। আমি বাধা দিতে গেলে বলে, ভাইয়ের জন্য দরদ বেশি। ওই সময় তারা আমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। আমার ব্যাগে থাকা বাবার পেনশনের ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।

নিহতের ভাই মাহফুজ মিয়া বলেন, সৈকত গ্রুপের ৩০ থেকে ৩৫ জন লোক আমার ভাইয়ের ওপর হামলা করেছে। তারা আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।

শিবপুরে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত নতুন নয়। শিবপুরে মূলত তিনটি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। ধানুয়া এলাকার আলী, শিবপুর বাজার এলাকার সাদ্দাম ও বান্দারদিয়া এলাকার সৈকত কিশোর গ্যাংগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা পান থেকে চুন খসলেই মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে শিবপুরে মহড়া দেয়। স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ নিয়মিত।

তাদের মধ্যে বিরোধের জেরে এর আগে ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল আলী গ্রুপের কিশোর সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে শেখ রাসেল শিশু-কিশোর স্মৃতি সংসদের শিবপুর পৌরসভা শাখার সভাপতি নাঈম মিয়াকে। এ ঘটনার পর কিছুদিন কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা নীরব থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক মদদে তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।


স্থানীয় রাজনীতিতে গুঞ্জন রয়েছে, আলী গ্রুপের আলীকে নাকি বাড়ি বানিয়ে দিচ্ছেন প্রভাবশালী এক রাজনীতিবিদ।

যদিও বরাবরই কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন শিবপুরের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তিনি বলেন, আমি জেলা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে কিশোর গ্যাং নির্মূলের দাবি জানিয়েছি। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনের মাধ্যমে সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কোনো দল নেই। আমি শিবপুর থেকে কিশোর গ্যাং নির্মুল চাই।

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ গিয়েছিল সত্য, তবে তখন মারুফকে পায়নি। পরে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত মারুফও সক্রিয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তার বিরুদ্ধে থানায় দুটি হত্যা চেষ্টা মামলা রয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ওসি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অনেকের ছত্রছায়ায় থেকে অপকর্ম করছে। এখন শিবপুরের রাজনৈতিক নেতাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি চায়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কিশোর গ্যাং নির্মূল সম্ভব নয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।