ঢাকা: চাঁদা না পেয়ে রাজধানীর ফার্মগেটে খাবার হোটেল, চায়ের দোকান ও লেগুনা ভাঙচুর করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসী মিথুন ঢালী ও তার বাহিনী। গত ৭ জুলাই সকাল সোয়া ৬টার দিকে ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের টিএন্ডটি মাঠ সংলগ্ন ফুটপাতের কয়েকটি দোকানে এবং খাবারের হোটেলে আকস্মিক ভাঙচুর চালান মিথুন ঢালী এবং তার ব্যক্তিগত সহযোগী টুটুল।
দিনদুপুরে মিথুন ঢালী তাণ্ডব চালালেও তাকে বাধা দেওয়ার কেউ ছিল না। তার খুঁটির জোর কোথায় জানতে চেয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, মিথুন ও তার সহযোগীরা লাঠি হাতে হোটেল থেকে ক্রেতাদের বের করে দিচ্ছেন। এরপর দোকানের মালিক ও শ্রমিকদের বের করে দিয়ে দোকানের শাটার বন্ধ করে দেন। চাঁদা না দেওয়া অবধি দোকান বন্ধ থাকবে বলে হুমকি দেন তারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিথুন ঢালী প্রথমে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে টিএন্ডটি মাঠ সংলগ্ন খাবার হোটেলের পেছনে এসে ফুটপাতে চায়ের দোকানদার ও হকারদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। দোকানদাররা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মারধর করতে শুরু করেন। কয়েকজনকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। চায়ের দোকানগুলোতে ভাঙচুর এবং ক্রমাগত লাথি দিয়ে তাদের দোকানের জিনিসপত্রগুলো রাস্তায় ফেলতে থাকেন মিথুন ঢালীর সহযোগীরা। হকারদের মারধর করে ফেলে দিয়ে তাদের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে হুমকি দেন তারা। এরপর পার্শ্ববর্তী খাবার হোটেলের জানালার গ্লাস ভাঙচুর হোটেল স্টাফদের মারধর এবং সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে হোটেল ভাঙচুর করে হোটেলে খেতে বসা ক্রেতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হোটেল থেকে বের করে দিয়ে হোটেলের দরজার শাটার বন্ধ করে দেন মিথুন ঢালী।
মিথুন ঢালীর সহযোগীরা
এ ছাড়াও পার্শ্বর্তী খামারবাড়ি খেজুর বাগানের লেগুনা স্ট্যান্ডে লেগুনা ড্রাইভার-হেলপারদের কাছে চাঁদা দাবি করেন মিথুন ঢালী। ড্রাইভার-হেলপাররা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রথমে ড্রাইভার-হেলপারদের এবং পরে যাত্রীদেরও মারধর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে কয়েকটি গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙে দেন তিনি।
সাধারণ পথচারীরা বিষয়টি জানতে চাইলে তাদের ওপরও চড়াও হন মিথুন ঢালী। এরপর উপস্থিত লোকজন, লেগুনার যাত্রী ও হকাররা বিক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ঘিরে ধরেন এবং ঘরোয়া হোটেলের সামনে, ময়লার ডাস্টবিনের পাশের রাস্তায় গণপিটুনি দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের এক চা দোকানদার বলেন, আমরা বিগত ১৫-২০ বছর যাবত এখানে দোকানদারি করছি। মিথুন ঢালী প্রায়ই এসে আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করতো, না দিলে দোকানপাট ভাঙচুর করতো। আজকেও একইভাবে দোকানগুলো ভাঙা শুরু করলে বিক্ষুব্ধ হয়ে দোকানদার ও স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দিয়েছে।
এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ক্যাডার বাহিনীর ১৫-২০ জন সদস্য ইন্দিরা রোডে লেগুনা স্ট্যান্ডে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং পার্শ্ববর্তী বিকাশের দোকানে ভাঙচুর করে। আনুমানিক ৩৫টি লেগুনায় ভাঙচুর এবং কয়েকজন ড্রাইভার-হেলপারকে মারধর করে তারা।
এক পর্যায়ে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশের গাড়ি ঘটনাস্থলে আসার পরেও পুলিশের সামনে তারা গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সারা দিন মোটরসাইকেল নিয়ে ইন্দিরা রোড এবং রাজাবাজারের বিভিন্ন গলিতে শো-ডাউন দেয় মিথুন ঢালীর ক্যাডাররা।
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিথুন ঢালীর সন্ত্রাসী বাহিনীর কিছু সদস্যদের চিহ্নিত করা গেছে। তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম এপিক, কপিল, আলভী, নাজমুল ইসলাম শান্ত, প্রশান্ত নন্দী দুর্জয়, শামীম শেখ, কাদির, শফিকুল, সম্রাট ঢালীসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লেগুনা মালিক বলেন, আমরা তাদের আতঙ্কে রাস্তায় গাড়ি বের করতে পারছি না, রাস্তায় গাড়ি বের করলেই গাড়ি ভাঙছে এবং জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে, ড্রাইভার হেলপারদের মারধর করছে। আমরা গরিব মানুষ গাড়ি বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরানের সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ও বিক্ষিপ্ত হাতাহাতির ঘটনা শুনেছি। কিন্তু কোনো পক্ষই এখনো আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ নিয়ে এলে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
ডিএইচবি/এমজেএফ