ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বৈষম্য দূর করতে কোটার প্রয়োজন আছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
বৈষম্য দূর করতে কোটার প্রয়োজন আছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ঢাকা: বৈষম্য দূর করতে কোটার প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। পাশাপাশি এ বিষয়ে আদালতের আদেশের পর আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই বলেও মনে করেন তিনি।

শনিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাদের দাবি পরিবর্তন করা হচ্ছে। তারা একেকবার রাষ্ট্রের একেক অঙ্গের কাছে দাবি জানাচ্ছে। প্রথমে আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল হাইকোর্টের আদেশে সরকারের জারি করা যে পরিপত্র বাতিল করা হয়েছিল তা পুনর্বহাল করতে হবে। এটা পুনর্বহাল করার ক্ষমতা শুধু বিচার বিভাগেরই আছে। কাজেই ধরে নেওয়া যাক তারা পরিপত্রটি পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছিল হাইকোর্টের কাছে। হাইকোর্টের এ আদেশ রাস্তায় আন্দোলন করে পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। হ্যাঁ রাস্তায় আন্দোলন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। এটি পরিবর্তনের একমাত্র উপায় সর্বোচ্চ আদালতে যেতে হবে। যখন দেখা গেল হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করলো এবং আইনি লড়াই শুরু করলো তখন সরকার পক্ষ ও আন্দোলনকারীদের অবস্থান একই হয়ে গেল। আন্দোলনকারীরা তাদের পক্ষ থেকে আইনজীবীও নিয়োগ করলেন এবং সরকারের সঙ্গে পক্ষভুক্ত হলেন। অথচ আন্দোলনকারীরা তখন তাদের দাবি পরিবর্তন করলো। তখন তারা বলা শুরু করলো সরকারকে কমিশন গঠন করতে হবে। যখন সরকার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে সর্বোচ্চ আদালতে আইনি প্রক্রিয়ায় ঢুকে গেছে তখন তো কমিশন গঠন করার কোনো সুযোগ নেই এবং এটি অসাংবিধানিক হবে। কিন্তু তারা (আন্দোলনকারীরা) এ অসাংবিধানিক দাবি করা শুরু করলো। এর মধ্যে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা নিয়ে আসতে সক্ষম হন। যার ফলে কোটা বিষয়ে সরকারের ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র সেটি পুনর্বহাল হয়ে যায়। তার মানে আন্দোলনকারীদের প্রাথমিক দাবি চার সপ্তাহের জন্য পূরণ হয়ে গেল।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ তথা সরকার যখন আদালতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার পথে এগোচ্ছে তখন আন্দোলনকারীরা আবার তাদের দাবি পরিবর্তন করে বলা শুরু করলো বিচার বিভাগ নয়, নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে সমাধান চাই। অথচ সর্বোচ্চ আদালতে প্রক্রিয়া পুরোপুরি সমাপ্ত না করে সরকার এ বিষয়ে কোনো কিছুই করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়ারও সুযোগ নেই।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ থেকে। এটি আদালত বা সংসদের বিষয় নয়। সর্বশেষ হাইকোর্টের আংশিক রায়ে দেখা গেল আদালত কোটা সংস্কারের জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। তখন আন্দোলনকারীরা আবার দাবি পরিবর্তন করে বলছে সংসদ বা আইন সভাকে আইন করতে হবে। প্রথমে আদালতের কাছে, তারপর নির্বাহী বিভাগের কাছে, এখন সংসদের কাছে দাবি।

আন্দোলনকারীদের দাবি বার বার পরিবর্তন হচ্ছে- এমন প্রশ্ন করে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, এতে প্রমাণিত হয় তারা কোনো বিষয় নিয়ে ভালোভাবে জ্ঞাত নয়। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের মাধ্যমে সরকারি পরিপত্র পুনর্বহাল হওয়ার পর আন্দোলনকারীদের প্রাথমিক পূরণ হওয়ার পর এবং তাদের মৌলিক দাবি ও সরকারের অবস্থা একই হওয়া স্বত্বেও যারা বারবার দাবি পরিবর্তন করে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং এখনো আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, আমি মনে করি তারা কোটা পদ্ধতি সংস্কার চায় না। তাদের অন্য কোনো দুরভিসন্ধি আছে।

পৃথিবীর সব দেশে কোট ব্যবস্থা আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশে কোটায় যারা চাকরি পাচ্ছেন তাদের আগে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হচ্ছে। বিষয়টি এমন নয় যে তাদের ঘর থেকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তাদের সন্তান, পরিবার বংশধররাও দীর্ঘদিন বৈষম্য, বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। যারা এমন বঞ্চনার শিকার হয়েও মেধা তালিকায় ঢুকেছে, তাকে কম মেধাবী বলবেন? এটা তো অন্যায্য কথা। বৈষম্য দূর করার জন্য কোটার প্রয়োজন। সারা জীবন যে বৈষম্যটা তাদের সঙ্গে হয়ে এসেছে, এটা দূর করতে হবে শেষ মাথায় এসে। কোটা বৈষম্য তৈরি করে না।

সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে, সেই দুর্ভোগ নিরসনে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইল তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো আন্দোলনে যৌক্তিকতা থাকলে, তা দুর্ভোগ সৃষ্টি করলেও জনগণ মেনে নেয়। কিন্তু আজ যখন স্পষ্ট হয়ে গেল, আন্দোলনকারীদের দাবির পক্ষেই সরকার আইনি লড়াই করছে, তারাই আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে পক্ষভুক্ত হয়েছে, তখন আন্দোলনের নামে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি করা একেবারেই অযৌক্তিক। কোনো আন্দোলন কখনো সফল হয় না যদি এর যৌক্তিক ভিত্তি না থাকে। সরকারের দায়িত্ব জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া। গায়ের জোর পাহাড় ঠেললে সরকারকে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪, আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা
এসসি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।