ঢাকা: দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীগুলোর পানি দুই কূল ছাপিয়ে লোকালয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললো৷ বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হলেও নদ-নদীর পানি কমছে। তবে এখনও ১২ জেলার নিম্নাঞ্চলের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দিন পার করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় শনিবার (১৩ জুলাই) এমন তথ্য জানিয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে যা তিনদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে যা একই সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে যা অব্যাহত থাকতে পারে।
এছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানির সমতল সার্বিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যা দুদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে পদ্মা নদী গোয়ালন্দ পয়েন্টে সতর্ক সীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা নদী ও দুধকুমার নদের পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। দুধকুমার নদ সংলগ্ন কুড়িগ্রাম জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। আবার মহানন্দা ব্যতীত দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আত্রাই নদী সংলগ্ন সিরাজগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ধীর গতিতে উন্নতি হতে পারে।
আগামী দুদিনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে ১২ জেলার লাখ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিলেট: অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোর পানি ৬টি পয়েন্টে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৩ উপজেলার তিনটি পৌরসভা ও ৯৮ ইউনিয়নের ১১১১ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত রয়েছে। প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত উপজেলাসমূহের ২১৬ আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ হাজার ৬৪১ জন অবস্থান করছে।
সুনামগঞ্জ: জেলার ১২ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় জেলার ১২ উপজেলার ৮০ ইউনিয়নের ৮০ হাজার ২০৮ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং মোট ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৫৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য জেলায় মোট পঞ্চাশটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় মোট ১ হাজার ৬৮১ জন ও ১১৩ গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজার: নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে মৌলভীবাজার জেলার ৫ উপজেলার ৩১ ইউনিয়ন ও পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ৪৭ হাজার ২১২ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ২ লাখ ৩৪ হাহার ৭৫৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রংপুর: সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে গঙ্গাছড়া ও কাউনিয়া উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৩০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ও ১ হাজার ৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাইবান্ধা: জেলার ঘাঘট ও যমুনা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি সাঘাটা পয়েন্টে বিপদসীমার ২৩ সেন্টি মিটার ও ফুলছড়ি পয়েন্টে ১৮ সেন্টি মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি হ্রাস অব্যাহত আছে। উজান থেকে নেমে আসা পানি ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি চার উপজেলার ২৬ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ৩৪ হাজার ৮৪৮ ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯২ জন।
জামালপুর: যমুনা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২ সে.মি. উপর দিয়ে উপর ও জগন্নাথগঞ্জ পয়েন্টে ৮১ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৬ উপজেলার ৪১ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৫৮ হাজার ১৮২ পরিবার বর্তমানে পানিবন্দি। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ২ লাখ ৪৬ হাজার ২২৮ জন।
ফেনী: সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার মহুরী ও কহুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার মোট ১৩ ইউনিয়নের ১৩ হাজার ৩৮৮ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম: নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার ৫৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৩৪ হাজার ৩০৫ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একত্রিশটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি: অতিবৃষ্টির ফলে জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার ৫ ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয় এবং ৪৫-৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
বগুড়া: সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ৩ উপজেলার ১৮ ইউনিয়নের পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ২৬ হাজার ৫৫০ ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ১৩২।
লালমনিরহাট: জেলার ধরলা নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বর্তমানে বিপদসীমার সামান্য ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে জেলার দুই উপজেলার ৮ ইউনিয়নের ৯৫০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৩৮ হাজার।
সিরাজগঞ্জ: বন্যার পানিতে জেলার পাঁচ উপজেলার ৩৪ ইউনিয়নের ২৩ হাজার ৮২১ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৬৫৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
ইইউডি/এমজে