ঢাকা: মাদক নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় পুরস্কার পাচ্ছে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত মাদক নিরাময় কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’। সেরা নয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ওয়েসিস রয়েছে সবার ওপরে।
২০২১ সালের অক্টোবরে রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে গড়ে তোলা হয় প্রতিষ্ঠানটি। উন্নত ও মানসম্মত সেবা দিয়ে তিন বছরের কম সময়ে ব্যাপক প্রশংসিত ও মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
রোববার (১৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছ থেকে পুরস্কার নেবেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী দিবস উদযাপন উপলক্ষে নির্বাচিত সেরা প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে অধিদপ্তরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও নিবন্ধিত এনজিওগুলোর মধ্যে নির্বাচিত নয় প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হবে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সভাপতিত্ব করবেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান।
পুরস্কারের জন্য মনোনীত অন্য আটটি প্রতিষ্ঠান হলো—বারাকা বাংলাদেশ মাদকাসক্তি চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেড মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, বিওয়াইএফসি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, সেফ হোম মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র, হেল্প মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, আসক্ত পুনর্বাসন সংস্থা (আপস) এবং মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)।
ওয়েসিসের পুরস্কারপ্রাপ্তিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওয়েসিস সেবার মানে কোনো আপস করেনি। আমরা সেবাকেই গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এখানে যারা সেবা নিতে আসেন তারা নতুন জীবনে ফিরতে চান।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এখানে সেবা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাই অল্প দিনে সবার কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ভবিষ্যতে ওয়েসিসকে আরও জনপ্রিয় ও আন্তর্জাতিক মানের করতে আমরা কাজ করছি।
রিসোর্টের আদলে মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, এ জন্য মানিকগঞ্জে জায়গাও কেনা হয়েছে বলে জানান হাবিবুর রহমান। সেখানে থাকবে উন্মুক্ত জায়গা, খেলার মাঠ। পাশে কালিগঙ্গা নদীতে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা থাকবে।
নান্দনিক পরিবেশে উন্নত সেবা ওয়েসিসে
দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ওয়েসিস। মনোমুগ্ধকর ও নান্দনিক পরিবেশে উন্নত ব্যবস্থাপনায় এখানকার চিকিৎসা পদ্ধতি ও সবার আন্তরিকতা মাদকাসক্তদের দ্রুত পুনর্বাসিত হতে সহায়তা করে। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মাদকাসক্ত নারী-পুরুষকে চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছে।
ওয়েসিসের সাততলা ভবনে আবাসিক চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি আউটডোর সেবাও দেওয়া হয়। রয়েছে সর্বাধুনিক প্যাথলজি ল্যাব, এসি ফ্লোর, জেনারেল বেডের ওয়ার্ড। বিশেষ কেবিন ও ইনডোর গেমসের পাশাপাশি পড়ালেখার জন্য লাইব্রেরির সুব্যবস্থা আছে। ভবনের ছাদে গড়ে তোলা হয়েছে সুসজ্জিত বাগান।
প্রাকৃতিক পরিবেশে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগীদের জন্য ইয়োগা ও মেডিটেশন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বাগানে। ছাদবাগানের পাশে ব্যায়ামাগার।
মাদকাসক্তদের পরিপূর্ণ সেবা দিতে সরকারের সব বিধিমালা মেনে গড়ে তোলা হয়েছে ওয়েসিস। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসক, সাইকোলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ইয়োগা এক্সপার্ট এবং অভিজ্ঞ অ্যাডিকশন কাউন্সেলরদের মাধ্যমে সেবা পাচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
আরও পড়ুন:
মাদকসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের ধারণা বদলে দিয়েছে ‘ওয়েসিস’
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
পিএম/এমজেএফ