ঢাকা, রবিবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩১, ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৫ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন

লোকসানের রেকর্ড ভেঙে আরও ভারী ক্ষতির পাল্লা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
লোকসানের রেকর্ড ভেঙে আরও ভারী ক্ষতির পাল্লা!

রাজশাহী: চলতি মৌসুমে হাত গুনে মাত্র পাঁচ দিন চলেছিল ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। তাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।

লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা লোকসানের সব অতীত রেকর্ড ভেঙে ক্ষতির পাল্লাই হয়েছে ভারী। নানা আলোচনা-সমালোচনা থাকার পরও বিশেষ এই ট্রেনটি চালু করেছিল পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। তবে স্থানীয় চাষি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতায় এবারও আম পরিবহনে সফলতা পায়নি পশ্চিম রেলওয়ে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে থেকে পাওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমের আম পরিবহনের উদ্দেশ্যে গত ১০ জুন চালু হয় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। প্রথম দিন সুদূর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছায় ৪ হাজার ৭৫৮ কেজি আম নিয়ে। গেল তিন বছর থেকে লোকসানে থাকা এই ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি চলতি মৌসুমে অন্তত লাভের মুখ দেখবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছিল। এজন্য এই স্পেশাল সার্ভিসটি সফলভাবে পরিচালনা করতে লিফলেট বিতরণসহ ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সভা করে প্রচারণাও চালানো হয়েছিল।

তবে আগের ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকার লোকসান মাথায় নিয়ে ট্রেনটি চালু করা হলেও শেষ পর্যন্ত লাভ হয়নি বরং আগের লোকসানের রেকর্ড ভেঙেছে।

২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে করে ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। এর জন্য ট্রেনটি ভাড়া পেয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। আর ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসা করতে তেল খরচ হয়েছে ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। অর্থাৎ এ কয়েক বছরে ট্রেনের লোকসান হয়েছে ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকা।

এর ওপর চলতি মৌসুমে মাত্র পাঁচ দিন এই রুটে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চলেছে। এই পাঁচ দিনে ট্রেনে আম পরিবহন করা হয়েছে ১৮ হাজার ১৪৬ কেজি। এতে রেলের আয় হয়েছে মাত্র ২৭ হাজার ৩৪৫ টাকা। আর কোরবানি উপলক্ষে একই ট্রেনে দুদিনে পশু পরিবহন করা হয় একশ পাঁচটি। এতে পশ্চিমাঞ্চল রেলের আয় হয়েছে ৯২ হাজার ৮২০ টাকা। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে ম্যাংগো স্পেশাল ও ক্যাটল ট্রেনে মোট আয় হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ১৬৫ টাকা।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতে দৈনিক খরচ হয়েছে ১০ লাখ ২৩ হাজার ৮৪০ টাকা। অর্থাৎ, মোট সাত দিনে (ম্যাংগো ও ক্যাটেল স্পেশাল) ট্রেনটিতে মোট খরচের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা। আর তাই অংকের হিসাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মোট ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫ টাকা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আম পরিবহনে অব্যবস্থাপনা ও দায়সারা ভাবের কারণেই লাভজনক এই সেবা খাতটি শেষ পর্যন্ত লোকসানে পর্যুদস্ত। বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের অনলাইন বুকিং ও আধুনিক সেবার কাছে সরকারি এই সনাতনী সেবা কুলিয়ে উঠতে পারেনি। শিডিউল ঠিক না থাকা, সময়মতো আম পৌঁছানোর অনিশ্চয়তা এবং পাঠানো ও গ্রহণের ক্ষেত্রে নানা দুর্ভোগের চরম ঝক্কি ঝামেলা ছিল এবারও। তাই কম খরচের এই সরকারি সেবাটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ভরা মৌসুমে স্পেশাল ট্রেনে করে আম পরিবহন নিঃসন্দেহে রেলওয়ের একটি ভালো উদ্যোগ। তবে ব্যবসায়ীরা এটা থেকে তেমন সুফল পান না। কারণ, এর মাধ্যমে খরচ কম হলেও এটি ডোর টু ডোর সার্ভিস দেয় না। দেশের ডাক বিভাগের অনেক গাড়ি আছে। তাদের ডিজিটাল সিস্টেমও আছে। তারা যদি আন্তঃবিভাগীয় সভা করে আমগুলো ট্রেনে পরিবহনের পর আবার ডোর টু ডোর পরিবহন করে পৌঁছে দেয় তবে এটিই লাভজনক হবে। আর এই উদ্যোগ নিলে আম চাষি, ব্যবসায়ীরা ও সাধারণ মানুষও এতে আগ্রহ দেখাবেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আহমদ হোসেন মাসুম জানিয়েছেন, তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সেবা। তারা কম খরচে আম পরিবহনের সুযোগ করে দিতে চেয়েছেন সব সময়ই। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের মাধ্যমে আম পরিবহন করেননি। তারা রেলের ওপর আস্থা রাখতে না পারায় এই লোকসান গুণতে হয়েছে। অথচ, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন নিয়ে এই সার্ভিস চালুর আগেই সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় সভা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছিল। কিন্তু মানুষজন সড়ক পথকেই বেছে নিয়েছেন। আসলে কেউ একটা জায়গায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে তাদের সেখান থেকে বের করে আনা কঠিন বলেও মন্তব্য করেন, এই রেলওয়ে কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
এসএস/এমজে

 
 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।