ঢাকা, রবিবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩১, ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৫ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

প্রশ্নফাঁস

বাবা-কাকাদের কষ্টের টাকা জলে ফেলে লিটন কারাগারে, হতাশায় পরিবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
বাবা-কাকাদের কষ্টের টাকা জলে ফেলে লিটন কারাগারে, হতাশায় পরিবার

বরিশাল: পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বারপাইকা গ্রামের নির্মল সরকারের ছেলে লিটন সরকার ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গ্রামের বাড়িতে তার চৌ-চালা এক‌টি টিনের ঘর রয়েছে।

সেখানে লিটনের বাবা নির্মল সরকার, চাচা সুনীল সরকার ও স্বপন সরকার পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।

সুব্রত সরকার-শিউলী নামে গ্রেপ্তার লিটনের ভাই-বোন আছে। বোনের বিয়ে হয়েছে।   সবাইকে নিয়ে জীবন যাপন করতে কষ্ট হয় তাদের। ফলে লিটন কারাগারে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে তার পরিবার।

লিটনের বাবা নির্মল সরকার জানান, তার ছেলে ২০১৩ সালে বারপাইকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করে বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজে ভর্তি হয়। ২০১৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তার পড়ালেখার জন্য নিজের ৫০ শতাংশ জমি, স্বর্ণালংকার বিক্রি করে ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন তিনি। সব জলে গেছে তাদের। ছেলে কোন লোভে পড়ে এই অপরাধে যুক্ত হলো, সেই প্রশ্ন তার।

লিটনের চাচা সুনীল সরকার বলেন, মোরা লিটনের লেহা পড়ার লইগ্যা দিনমজুরের কাজ কইর‌্যা ডাহায় টাকা পাডাইসি। ও যে এই কাম করবে মোরা ঠাওর করতে পারি নাই। হ্যায় কারো লোভে পড়সে। দুই মাস আগে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার রাখালতলা এলাকার সুম্মিতা নামে এক মাইয়ারে বিয়া করসে হুনছি। হ্যায় এউক্কা ব্যাংকে চারহি হরে।

তার কথার অর্থ, দিনমজুরের কাজ করে তারা লিটনের পড়ালেখার জন্য টাকা পাঠিয়েছেন। কারও লোভে পড়ে লিটন এ অপরাধ করেছে। তারা শুনেছেন তাদের ভাতিজা লিটন দুই মাস আগে সুম্মিতা নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন, তিনি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন।

লিটন প্রশ্ন ফাঁসের মতো কাজ করতে পারে কিনা জানতে চাইলে চাচী নমিতা বলেন, মো ওরে ভগবানের মতো মানি। তারে হয় হুমকি দেছে, নাইলে টাহা পয়সার লোভ দেহাইল্লে। গরিব তো হ্যাতে কি অইছে তোরে বড়লোক বানাইয়া দিমু লোভ দেহাইছে। নয়তো মোগো পোলা কির লইজ্ঞা হে পথে যাইবে?

লিটনের বাবা কাঠ মিস্ত্রী। ছেলের গ্রেপ্তারের খবরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের ঘরে খাবার নেই। এ খবর জানান লিটনের প্রতিবেশী মায়া সরকার। তিনি বলেন, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। ওর মা আমাদের কাছে সাহায্যে সহযোগিতা চাইলে আমরা দিই। লিটনের জন্য তার মা অনেক কষ্ট করেছেন। মানুষের জমিতে বদলা দিয়ে খেয়েছেন। ওর কাকারা বাজার সদাই করতে না পারলেও লিটনকে টাকা দিতো।

আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিধান রায় বলেন, লিটনকে চিনি। ছেলে হিসেবে ভালো ছিল। শুনেছি সে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার ব্যাপারে তার পরিবার আমার কাছে কিছু বলেনি। লোকমুখে আলোচনা-সমালোচনায় শুনেছি বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেছে।  

আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় লিটন সরকার নামে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য আসেনি। এলে তদন্ত করে রিপোর্ট দেব।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
এমএস/এমজে

 
 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।