ঢাকা: দেশের ভবিষ্যৎ ছেলে-মেয়েরা যাতে পথ না হারায়, তারা যাতে সর্বনাশী নেশায় সম্পৃক্ত না হয়, সেজন্য মাদকের আগ্রাসন রুখতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক এখন সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে এর চাহিদা ও ক্ষতি হ্রাসের জন্য বিশ্বের সঙ্গে তিন অধ্যায় নিয়ে কাজ চলছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতিবছর ২৬ জুলাই সারা বিশ্বেই মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আমরাও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এই দিবসটি পালন করে থাকি। জাতিসংঘের স্লোগান এবার হয়েছে ‘মাদকের আগ্রাসন দৃশ্যমান, প্রতিরোধই এর সমাধান’।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা বাংলাদেশ কোনো মাদকের উৎপাদন করি না। কিন্তু ভৌগোলিক কারণে গোল্ডেন ট্রাইঅ্যাঙ্গেলের বা গোল্ডেন ক্রিসেন্ট বলে মাদকের বলয়ের ভেতরে বা পাশে বলেই আমরা এর প্রভাবটি খুব বেশি ফেস করে আসছি। প্রফেসর অরূপ রতন চৌধুরী বললেন দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি লোক নাকি মাদকাসক্ত। আমার কাছে সঠিক তথ্যটি নেই। তিনি যখন বলেছেন, তিনি রিসার্চ করেছেন তবে হতে পারে ১ কোটি। আমরা মনে করেছিলাম ৮০ লাখ। হয়তো সংখ্যা বাড়তেও পারে। তবে যাই হোক এটি একটি ভয়ঙ্কর সংখ্যা।
তিনি বলেন, এখন থেকেই যদি আমরা মাদকের বিরুদ্ধে কাজ না করি তবে আমাদের আগামীর স্বপ্ন সব ভঙ্গ হয়ে যাবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন, তেমন তিনি মাদককেও চিহ্নিত করেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে, মাদক কারবারি, অপব্যবহারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেই নির্দেশনা আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার চাহিদা হ্রাস করার জন্য ও মাদকবিরোধী বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা করা হচ্ছে। মাদক নির্মূল করতে মাদক আইনও সংশোধন করা হয়েছে। এই আইনের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলখানার দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানকার একটি বড় অংশ মাদক ব্যবসায়ী মাদকসেবী ও মাদকের সংশ্লিষ্টরা রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি। এর চাহিদা কমাতে ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। এজন্য বাচ্চাদের মধ্যে ছবি অংকন প্রতিযোগিতা করা হয়েছে। যাতে শিশুদের মধ্যে প্রথমের মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে ওঠে।
মাদকের কুফল প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ঐশীর কথা। ঐশী মাদকের আগ্রাসনে পড়ে তার বাবা-মাকে হত্যা করেছে। কতখানি মাদকাসক্ত হলে সে এই কাণ্ডটি করতে পারে, সেটি অনুমান করা যায়। আরও একটি ঘটনা, কেরানীগঞ্জ থেকে এক দম্পতি এসে বলেন- তাদের ছেলে বাসার ফ্রিজ, টিভি বিক্রি করে দিচ্ছে, মাদকাসক্ত হয়ে। তখন তাদের লিখিত দিতে বলি। তারা লিখিত দেয় এরপর ওই ছেলেকে মাদকাসক্ত কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। ১ মাস পর ওই ছেলের মা এসে বলেন আমার ছেলে খেতে পায় না শুকিয়ে যাচ্ছে। তাকে ছেড়ে দেওয়া যায় না?
মাদকের ক্ষতি হ্রাসের জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্র কাজ করছে। বর্তমানে মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে তেজগাঁওয়ে সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ১২৪ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও আরও চারটি কেন্দ্রে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারি কেন্দ্রের পাশাপাশি ২০২৪ সাল পর্যন্ত বেসরকারি ৩৩৮টি কেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব কেন্দ্রে ৩ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৪৮২ জন মাদকাসক্তকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মাদকের সাপ্লাই রোধের জন্য বিজিবিকে শক্তিশালী করা হয়েছে। পাশাপাশি র্যাব, কোস্টগার্ড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যাতে মাদক আমাদের দেশে না আসে সেজন্য আমরা কথা বলছি। মিয়ানমারকেও আমরা বলেছি। তারা আশ্বস্তও করেছিল, কিন্তু এখনও কিছুই করেনি। তাদের কার্যকর ভূমিকা এখনও দেখছি না। তাদের দেশে বর্তমানে যুদ্ধ চলছে। আশা করছি তাদের যুদ্ধ থামলেই তারা এই বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। আমরা নিয়মিত মিয়ানমার পুলিশের হেড অব ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ভারতের নার্কোটিক্স ডিপার্টমেন্টের চিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মশিউর রহমান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৪
এসজেএ/এমজে