বরিশাল: পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে প্রবাসে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন রংমিস্ত্রি জামাল হোসেন সিকদার (৪০)। আর সেজন্য সৌদি আরবে যাওয়ার সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছিলেন তিনি।
নিহত জামাল জেলার গৌরনদী উপজেলার পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের মৃত মহসিন সিকদারের ছেলে।
নিহতের স্বজনরা জানান, জামাল ঢাকায় রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। গত ঈদুল ফিতরের সময় বাড়িতে এসে আর ঢাকায় ফেরেননি। পরিবারের সচ্ছলতা আর একমাত্র মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে সৌদি আরবে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। চলতি মাসেই তার সৌদি যাওয়ার কথা ছিল।
গত ১৫ জুলাই একমাত্র মেয়েকে ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজে ভর্তি করানোর জন্য এবং বিদেশ যাত্রার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ের জন্য স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে শ্যালিকার বাসায় আসেন জামাল। ১৬ জুলাই মেয়েকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করেন।
গত ২০ জুলাই শ্যালক তাওহিদ আহম্মেদকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশ যাত্রার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ের জন্য চিটাগাং রোড দিয়ে মার্কেটে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জামাল।
নিহতের স্ত্রী শিউলি আফরোজ জানান, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে প্রায় ছয় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন জামাল। শুধু ফ্লাইটের তারিখ ঘোষণা বাকি ছিল। কিন্তু গুলিতে সব শেষ হয়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি একমাত্র মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করবে। আমাদের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। মেয়ের পড়ালেখা এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিউলি বলেন, নদী ভাঙনে স্বামীর বাড়িঘর হারিয়েছি। আর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় স্বামীকে হারালাম। এখন আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই নেই। তাই মুলাদী উপজেলার নাজিরপুরে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।
একমাত্র মেয়ের পড়ালেখার দায়িত্বভার গ্রহণ ও আর্থিক সহায়তা পেতে সমাজের বিত্তবানসহ প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন শিউলি আফরোজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
এমএস/এমজেএফ