বরিশাল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচিতে লাঠিচার্জের ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলায় হতবাক সবাই।
এরই মধ্যে সাংবাদিক সংগঠনগুলোরে নেতারা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বুধবার (৩১ জুলাই) বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মিথুন সাহাসহ নেতারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
বরিশালের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনিছুর রহমান খান স্বপন বলেন, আজকের ঘটনার ভিডিও দেখে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বুঝতে পারলাম সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা বা তাদের পেটানোর বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে যদি কেউ বলে বুঝতে পারিনি-সরি, তাহলে ভবিষ্যতে বিষয়টি আরও খারাপ অবস্থায় চলে যাবে। আজ সাংবাদিকরা যে অন ডিউটিতে ছিল তার প্রমাণ রয়েছে, কারণ মারধরের শিকার প্রত্যেকের আইডি কার্ড গলায় ঝোলানো ছিল এবং হাতে ক্যামেরা ছিল। ক্যামেরা দেখার পরও একজন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কীভাবে গণমাধ্যম কর্মীকে পেটায় সেটা বুঝি না। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত।
এদিকে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক খোকন আহমেদ হীর বলেন, কোন উদ্দেশ্যে হঠাৎ করেই বরিশালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হলো এটি খতিয়ে দেখা উচিত। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন কোন আন্দোলন উসকে দেয়াড় পাঁয়তারা না তো এটি।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরা এ হামলা চালিয়েছে। আর উপ-পুলিশ কমিশনার পদে থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব কীভাবে একজন কর্মকর্তা দেন সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত। বরিশালে সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে সেটি আমরা প্রত্যাশা করি সবাই।
দৈনিক যুগান্তরের ফটো সাংবাদিক শামীম আহম্মেদ বলেন, লাঠিচার্জের সময়ে আমি মাটিতে পড়ে যাই। আমার হাতে ক্যামেরা। তখনো আমাকে লাঠিপেটা করে। আজকের ঘটনায় পুলিশ মোটেও পেশাদারি আচরণ করেনি। অপেশাদার ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
হামলায় আহত বার্তা টোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি এসএলটি তুহিন বলেন, আমরা অনেক সাংবাদিক একসঙ্গে ছিলাম। শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করার সময়ে আমাদেরও পেটানো শুরু করে। আমি পায়ে আঘাত পেয়েছি। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।
হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া অন্য দুজন হলেন এনটিভির ক্যামেরা পারসন গোবিন্দ সাহা ও যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন হৃদয় চন্দ্র শীল।
স্থানীয় একটি দৈনিকের সাংবাদিক পাভেল বলেন, পুলিশ গণহারে সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। আমার গায়েও লাঠির আঘাত পড়েছে। তবে গুরুতর না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি।
আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা বলেছেন, লাঠিচার্জকারী টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্র্যাফিক) এস এম তানভীর আরাফাত। সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জকারী পুলিশ সদস্যের কাছেই ছিলেন তিনি। এ পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের লাঠিচার্জ করতে নিবৃত্ত করেননি। এ সময়ে পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদের গালিগালাজ করেছেন বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার চেয়েছে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি। সংগঠনটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস বলেন, দায়িত্বপালনকালে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের নিন্দা জানাচ্ছি। ঘটনার ভিডিও আমি দেখেছি। আমার মনে হয়েছে বিনা কারণে এবং সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাংবাদিকদের পিটিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা ও তার ইউনিট। এভাবে পুলিশ লাঠিচার্জ করার এখতিয়ার রাখেন না। যে পুলিশ কর্মকর্তার ইউনিট সাংবাদিক পিটিয়েছে সেই কর্মকর্তাসহ লাঠিচার্জকারী পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার দাবি করছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচিতে বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে প্রথমে নগরীর রোডের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে ও পরে সাড়ে ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে ফজলুল হক অ্যাভিনিউতে শিক্ষার্থীদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এসময়ে সাংবাদিকদেরও মারধর করা হয়। এছাড়া আন্দোলনকারী অন্তত ১২ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জের খবর পেয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জিহাদুল কবির আহত সাংবাদিকদের খোঁজখবর নিয়েছেন। সে সঙ্গে তিনি এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
এমএস/জেএইচ