ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিদেশে যাওয়ার দুদিন আগে গুলিতে লাশ হলেন রাজু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২৪
বিদেশে যাওয়ার দুদিন আগে গুলিতে লাশ হলেন রাজু

নারায়ণগঞ্জ: ৩৬ বছর বয়সী রাজু করতেন না কোনো রাজনীতি, ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।

২০০২ সালে জীবনের তাগিদে খুব অল্প বয়সে গ্রাম ছেড়ে আসেন ইট পাথরের শহুরে জীবনে । হাল ধরেন পরিবারের। তার আয়ে চলতো তার বাবা মা, স্ত্রীসহ তিন সন্তানের খরচ।

এ শহুরে জীবনে এসে অন্য একজনের গ্যারেজে থেকে একটু একটু করে কাজ শিখলেন গাড়ির যন্ত্রাংশ ঠিক করার। গাড়ির যন্ত্রাংশ ঠিক করতে করতে হয়ে গেলেন গ্যারেজের হেড মিস্ত্রি, তার কিছু বছর পর কিছু অর্থ জমিয়ে ও বন্ধুদের থেকে ধার নিয়ে নিজে দিয়ে ফেলেন একটি গাড়ির গ্যারেজ। বর্তমান দেশের প্রেক্ষাপটে এ গ্যারেজের আয় দিয়ে সংসার চালাতে খাচ্ছিলেন হিমশিম।

তাই পরিবারকে আরও ভালো রাখার জন্য পারি দিতে চেয়েছিলেন দূর প্রবাসে। প্রবাস জীবনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন উন্নত দেশ সিঙ্গাপুর। অনেক কষ্টের পর পেয়েছিলেন শ্রমিক ভিসা। কেটেছিলেন বিমানের টিকিটও কিন্তু প্রবাস জীবন শুরু করার দুদিন আগে গুলিতে মারা যান ৩৬ বছর বয়সী মো. রাজু। তার সম্পূর্ণ নাম সৈয়দ মোস্তফা কামাল রাজু। তার বাবার নাম সৈয়দ আব্দুল করিম।

গত শনিবার ( ২০ জুলাই) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে দেখতে গিয়ে মাথায় গুলবিদ্ধ হন রাজু। তাৎক্ষণিক তার বন্ধুরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যান এলাকার একটি স্থানীয় হাসপাতালে সেখানকার দায়িত্বরত ডাক্তাররা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বললে তারা অ্যাম্বুলেন্সযোগে সেখানে নিয়ে যান।  

পরবর্তীতে সেখানকার ডাক্তাররা অপারেশন করে তার মাথার ভেতর থেকে গুলি বের করে আইসিইউতে পাঠান। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া অবস্থায় তিনি সোমবার (২২ জুলাই) মারা যান। ওইদিন তাকে তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে দাফন করা হয়। অথচ বুধবার (২৪ জুলাই) সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে বিমানে উঠার কথা ছিল রাজুর।

নিহত রাজু নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকায় তার স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে। তার প্রথম সন্তান সৈয়দা আয়েশা (১৩),দ্বিতীয় সন্তান সৈয়দ রাইয়ান আব্দুল্লাহ (১১) , সর্বশেষ ছোট সন্তান সৈয়দ আবু বকর (০৫)। তার প্রথম দুই সন্তান পড়াশোনা করে স্থানীয় একটি মাদরাসায়।

নিহত রাজুর স্ত্রী আকলিমা আক্তার (৩১) বলেন, আমার স্বামী কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। তিনি যখন গ্যারেজ থেকে বাসায় ফিরতেন সব সময় তার হাতে কালি লাগানো থাকত। সংঘর্ষের দিন দুপুরে উনি (নিহত রাজু) বাসায় খেতে আসেন খাওয়া শেষে বাইরে গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে বাড়ির ছাদে যান কি হয়েছে তা দেখতে। ছাদ থেকে যখন দেখতে পেলেন বাইরে অনেক সাধারণ মানুষ সড়কের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তখন তিনিও ছাদ থেকে নেমে বাইরে চলে যান দেখতে। তখন হঠাৎ তার পাশে একজন গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে গেলে তিনি তাকে ধরতে যায় ঠিক তখন তার মাথায় এসে একটি গুলি লাগে। মাথা গুলি খাওয়ার পর তিনি হামাগুড়ি দিয়া বাসার নিচ পর্যন্ত আসেন তখন তার শরীর সম্পূর্ণ রক্তে লাল হয়ে যায় সেটা দেখে আমি আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর তার বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাত ১১টায় ডাক্তার অপারেশন করে সাধারণ ওয়ার্ডে দেয় সেখানে কিছুক্ষণ ওয়ার্ডে থাকার পর অবস্থা খারাপ হলে তাকে লাইফ সাপোর্ট দিতে আইসিউতে নিয়ে যান ডাক্তাররা। সেখানে নেওয়ার একদিন পর রাত দেড়টার দিকে আমার স্বামী মারা যান। ওইখান থেকে আমরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করি।

তিনি আরও বলেন, আমার বড় মেয়ে আয়েশা মাদরাসার আবাসিকে থাকে। আয়েশা তার বাবাকে বাসায় সুস্থ দেখে যায় কিন্তু বাসায় ফিরে দেখে বাবার নিথর দেহটি শুয়ে আছেন মসজিদের খাটিয়াতে। জানিনা এ সন্তানদের নিয়ে বাকি পথ কীভাবে কাটাব। সবার কাছে আমার একটাই চাওয়া আমাকে একটা চাকরির সুযোগ করে দিন আমি আমার এ তিন সন্তানকে নিয়ে কোনো রকম বেঁচে খেয়ে থাকতে পারি। আর অবশ্যই আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২৪
এমআরপি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।