বরিশাল: স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে নির্বাক ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া জসিম উদ্দিনের স্ত্রী সুমি আক্তার। জীবন-জীবিকার তাগিদে জসিম উদ্দিন পরিবার-পরিজন গ্রামের বাড়িতে রেখে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করতেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের বাঁকপুর গ্রামের বাড়িতে রেখে কর্মের সুবাদে রাজধানীর উত্তরাতে থাকতেন জসীম উদ্দিন। সেখানে ৫ নম্বর সেক্টরের এমএসএ ওয়ার্কশপে ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। আর থাকতেন ওই দোকানের গ্যারেজেই।
গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ৭ নম্বর সেক্টরে ফরহাদ অটো পার্টসের দোকানে যান মাইক্রোবাসের পার্টস কিনতে। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় দোকানের কাছাকাছি পৌঁছালেও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সহিংসতার মধ্যে রাস্তা পার হতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন জসিম। ঘটনাস্থলে থাকা লোকজনই তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক অনেক আগেই জসিমের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান।
নিহত জসিম উদ্দিনের ভাই নিজাম উদ্দিন জানান, তার ভাই কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ঢাকায় ছোট্ট একটা চাকরি করে বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য টাকা পাঠাতো। এ রুটি-রুজির তাগিদেই এক যুগেরও বেশি আগে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন জসিম।
এদিকে স্বামীর এমন মৃত্যু যেন মানতেই পারছেন না স্ত্রী সুমি আক্তার। তার কথা স্মরণে আসতেই চোখ গড়িয়ে জলের ধারা বইতে থাকে। অনেকটাই নির্বাক সুমির দিন কাটে স্বামীর কবর আর সন্তানদের মুখের দিক তাকিয়ে। তিনি বলেন, কার কাছে নালিশ করবো, কার কাছে বিচার চাইবো। ছোট্ট এ বাচ্চাদের নিয়ে আমি এখন কী করব, কিছুই জানি না।
তার মতো করে বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন, বাবার কথা মনে পড়তেই তিনিও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদেন। আর মৃত্যুর আগে বাবার সঙ্গে বলা শেষ কথাগুলোর স্মৃতিচারণ করে বেড়ান। যদিও এত কিছু বোঝেন না শিশু সন্তান সাইফ। তবে বাবার কবরের কাছে গেলে আদো আদো মুখে বাবা ডাকটি দিয়ে ওঠেন।
চার ভাইয়ের মধ্যে জসিম মেজ জানিয়ে বড় ভাই নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা চার ভাই-ই জীবিকার তাগিদে বাড়ির বাইরে থাকি। আর বাবার বাড়িতেই চার ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানেরা থাকে। ২০২০ সালে বাবার মৃত্যু হয় আর অসুস্থ মা বর্তমানে শয্যাশায়ী। চার ভাইয়ের অল্প আয়ে কোনোভাবে সংসার চলছিল আমাদের। কখনো কল্পনা করিনি এভাবে মেজকে হারাব।
তিনি বলেন, জসিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে আমার আরেক ভাই সাহাবুদ্দিন ঢাকায় ছুটে আসে। গুলিবিদ্ধ নিজামের মরদেহ ১৮ জুলাই রাতে গ্রহণ করে ১৯ জুলাই ভোরে নিয়ে আসে বাড়িতে। পরে সেখানেই জানাজা শেষে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
অসহায় এ পরিবারটিকে সহায়তা করার কথা জানিয়ে সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফুয়াদ সর্দার বলেন, সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জসীম উদ্দিনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ওদের পরিবার তেমন একটা সচ্ছল নয়। জসিমের মৃত্যু ওদের জন্য খুবই কষ্টের, কেউ মেনে নিতে পারছে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২৪
এমএস/জেএইচ