সিলেট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদফা দাবিতে সারা দেশের মতো সিলেটেও অসহযোগ আন্দোলন চলছে।
রোববার (৪ আগস্ট) ঘোষিত এ কর্মসূচির প্রভাব পড়েছে সিলেটে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহানগরের বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট ও জিন্দাবাজার এলাকায় কোনো মার্কেট বা দোকান খোলা দেখা যায়নি। অন্যান্য দিনের মতো সড়কে কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটে চলা নিতান্তই কম। তবে অফিস-আদালত স্বাভাবিকভাবে চলছে। গণপরিবহন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রী, জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, অসহযোগ আন্দোলনকে ঘিরে সিলেটে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নগরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নগর এলাকায় কিছু কিছু দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অফিস-আদালত স্বাভাবিকভাবে চলছে। কেবল দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল সীমিত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নগরের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তাই ধ্বংসাত্মক কাজে যারাই লিপ্ত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাকশনে যাবে।
এ আন্দোলন নিয়ে সিলেটে জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। গত ১৫ জুলাই থেকে চলা বিক্ষোভ-আন্দোলনে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে সিলেট। এ পর্যন্ত আন্দোলনে সিলেটের দুজন মারা গেছেন। একজন সাংবাদিক ও অপরজন শাবিপ্রবির ছাত্র। এছাড়া শুক্রবার হবিগঞ্জে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধি হয়ে বিদ্যুৎ কর্মকর্তা মারা গেছেন।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক গণমাধ্যমকে বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী অসহযোগ আন্দোলন পালনে আমরা রোববার বেলা ১১টায় বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেব। পরে নগরের কোর্ট পয়েন্টে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করব। জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া আর সরকারি-বেসরকারি কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
এদিকে সিলেটে আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা জানিয়েছেন- অসহযোগ আন্দোলনের সময় হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, জরুরি পরিবহন সেবা (ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন), অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা ও এ খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবহন সেবা চালু থাকবে। তবে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক কোনো কর বা খাজনা দেবেন না। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না। সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না। সব ধরনের সরকারি সভা-সেমিনার ও আয়োজন বর্জন করবেন। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।
তারা আরও জানান, দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টসকর্মী ভাই-বোনেরা কাজে যাবেন না। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। পুলিশ সদস্যরা রুটিন দায়িত্ব ছাড়া কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা-পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। বিজিবি ও নৌবাহিনী ছাড়া অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে দায়িত্ব পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও উপকূলীয় এলাকায় থাকবে।
এছাড়া আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না। জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয় তার জন্য সব অফশোর লেনদেন বন্ধ থাকবে। বিলাসদ্রব্যের দোকান, শোরুম, বিপণিবিতান, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২৪
এনইউ/আরবি