ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অগ্নিগর্ভ সারা দেশ, সংঘর্ষে নিহত ৮৬

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৪
অগ্নিগর্ভ সারা দেশ, সংঘর্ষে নিহত ৮৬ ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘অসহযোগ আন্দোলন’কে ঘিরে সারা দেশে সংঘর্ষ-সহিংসতায় অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

আহত হয়েছেন কয়েক শ’ মানুষ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত এই প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ১১ জন, টাঙ্গাইলে একজন, শেরপুরে তিনজন, ফেনীতে আটজন, নরসিংদীতে ছয়জন, মাগুরায় চারজন, ঢাকায় তিনজন, কুমিল্লায় তিনজন, পাবনায় তিনজন, মুন্সিগঞ্জে দুজন, বগুড়ায় চারজন, রংপুরে তিনজন, সিলেটে ছয়জন এবং বরিশাল, জয়পুরহাট, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার ও কিশোরগঞ্জে একজন করে নিহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে পড়ুন বাংলানিউজের করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো খবর।

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন।  

শেরপুর: শেরপুরে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

পাবনা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাবনা শহর। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) পাবনার খেয়াঘাট মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। এরপর বিক্ষোভকারীরা এক আওয়ামী লীগ নেতার গাড়ি এরপর গাড়ি পুড়িয়ে দেন।

মুন্সিগঞ্জ
ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে মুন্সিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। রোববার সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু হেনা জামাল বলেন, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দুজন মৃত ছিল। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছর। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়া
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় রোববার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় চারজন নিহত হয়েছেন। নিহত একজনের নাম মুনিরুল ইসলাম (৩৪)। তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকায়। অপর তিনজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।  

রংপুর
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সরদার হোমের ইনচার্জ মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বরিশাল
বরিশালে মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরীকে রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্বজনরা জানান, নগরের করিম কুটির এলাকায় আন্দোলনকারীরা আকস্মিক হামলা চালায়। এ সময় সেখানে থাকা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে আওয়ামী লীগ নেতা টুটুলকে কুপিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাধারণ সম্পাদক ডা. এ এস এম সায়েম জানান, টুটুলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আর আঘাতগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যে মাথার খুলির ভেতরে থাকা অনেক কিছুই বাইরে বের হয়ে গেছে। এক কথায় রক্তক্ষরণ ও মাথায় আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

মাগুরা
জেলার সদর, শ্রীপুর ও মহম্মদপুর উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এ পর্যন্ত মোট চারজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অনেকে।  রোববার (৪ আগস্ট) দিনভর সংঘর্ষে হতাহতের এসব ঘটনা ঘটে।  

সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এতে ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

অন্যদিকে সদর ও রায়গঞ্জ উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া  সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বাসভবন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হলে তার বাসা থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ফেনী
ফেনীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। দুপুরে শহরের মহিপালে দফায় দফায় সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে ছয়জনের মরদেহ যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ঢাকা
ঢাকায় সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফার্মগেট, জিগাতলা ও সাভারের আশুলিয়ায় একজন করে নিহত হন।   

কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। রোববার  দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের স্টেশন রোড এলাকায় এ সংঘর্ষ ঘটে।

কুমিল্লা
কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে সংঘাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেবিদ্বারসহ আরও বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন।

সিলেট
সিলেটের গোলাপগঞ্জে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও চিকিৎসক শাহিন আহমদ নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হবিগঞ্জ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘অসহযোগ আন্দোলন’ ঘিরে হবিগঞ্জে সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে রিপন শীল (২৭) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আরও শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে লক্ষ্মীপুরে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক। রোববার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জয়পুরহাট
জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে রোববার হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও ছররা গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিতে মেহেদী হাসান বিশাল (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। হামলা ও সংঘর্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।

কক্সবাজার
কক্সবাজারে দিনভর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। এ সময় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

নরসিংদী
জেলার মাধবদীতে আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন।  

নিহত সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৪
আরএইচ/এইচএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।