ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক আন্দোলনকারীদের দখলে, যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৪
বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক আন্দোলনকারীদের দখলে, যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ

বরিশাল: বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। নথুল্লাবাদ থেকে চৌমাথা পর্যন্ত সড়কের বেশ কয়েকজায়গায় অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

পাশাপাশি এই সড়কের পাশে থাকা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ কয়েক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।

রোববার (৪ আগস্ট) আড়াইটা পর্যন্ত মহাসড়কটিতে লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছেন। এর আগে বেলা ১১টায় বরিশাল নগরের সরকারি ব্রজমোহন কলেজের প্রথম গেট থেকে গণমিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশালের সমন্বয়করা। মিছিলটি কিছুদূর যেতেই এর নেতৃত্বভাগে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনসহ নেতাকর্মীদের দেখা যায়।

পরে মিছিলটি নগরের নথুল্লাবাদ গোলচত্ত্বরে এসে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক আটকে অবস্থান নেয়। মুহূর্তের মধ্যে ওই এলাকা দিয়ে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ওই এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় সকাল থেকেই কোনো আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি।

দুপুর ১২টার মধ্যে নথুল্লাবাদ থেকে চৌমাথা পর্যন্ত সড়কে আন্দোলনকারীরা দখলে নেয়। এসময় আন্দোলনকারীদের লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে হাঁটতে দেখা যায়। তারা সিঅ্যান্ডবি রোড কাজীপাড়ায় ২২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাংচুর চালায় এবং ফার্নিচারে অগ্নিসংযোগ করে। পাশাপাশি কাজীপাড়া মসজিদের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুর করে। অ্যাম্বুলেন্সের মালিক শাওন জানান, ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সটিতে কোনো রোগী ছিল না। আর চালক নেমে যাওয়ায় প্রাণে রক্ষা পায়।

অপরদিকে নগরের চৌমাথা এলাকায় ৬টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা, সেইসাথে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা একটি টিনের ঘরও ভাংচুর করে। এসব ঘটনার মধ্যেই গোরস্থানরোডের মুখে ও চৌমাথা এলাকায় আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে আন্দোলনকারীদের। পাশাপাশি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

এছাড়া বিক্ষোভকারীরা নগরের করিম কুটির এলাকায় পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের বাসায় হামলায় চালায়। এসময় প্রতিমন্ত্রীসহ আশপাশের বাসায় ব্যাপক ভাংচুর চালায় তারা, পাশাপাশি তার বাসার সামনে থাকা ২০টির মতো মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা।

এ সময় ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীদের আকস্মিক হামলা থেকে রক্ষা পেতে টুটুল চৌধুরী তার বৈধ অস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার, আন্দোলনকারীরা কুপিয়ে ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, চৌমাথা থেকে মন্ত্রীর বাসা পর্যন্ত সড়কের ডিভাইডারে থাকা লোহার পাইপ উঠিয়ে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এছাড়া রোড লাইটের বেশ কয়েকটি পোস্ট উপড়ে ফেলা হয়েছে।

দুপুর একটার দিকে নগরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। এসময় জেলা বাস মালিক গ্রুপ ও জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।

ঘটনাস্থলগুলো থাকা সাংবাদিকরা জানান, ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মধ্যেও কোনো ধরণের ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে দেয়নি আন্দোলনকারীরা। কেউ তুললে তার মোবাইল নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয়। আর এসব কাজ সাধারণ ছাত্রদের দেখা যায়নি। বেশিরভাগ মানুষই অচেনা।

এছাড়া নগরের সদ‌ররোডে বিএন‌পি দলীয় কার্যালয় ভাংচুর করেছে ছাত্রলী‌গের নেতাকর্মীরা। পাশাপা‌শি সেখানে দু‌টি মোটরসাইকেলে আগ্নিসং‌যোগ করা হয়।

নথুল্লাবাদ এলাকায় থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশালের সমন্বয়করা জানিয়েছেন, তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার পক্ষে। কিন্তু বাহিরের কিছু অচেনা লোক ঢুকে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে সাধারণ ছাত্ররা কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।

দুপুর ৩টার দিকে নগরের করিম কুটির এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। আন্দোলনকারীরাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৪
এমএস/এমজে

 
 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।