ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় নিহত বেড়ে ৪, আহত দুই শতাধিক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৪
বগুড়ায় নিহত বেড়ে ৪, আহত দুই শতাধিক

বগুড়া: বগুড়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থীসহ চারজন নিহত এবং প্রায় দুই শতাধিক আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষ চলাকালে বগুড়া সদর, শেরপুর এবং দুপাঁচিয়া উপজেলায় থানাসহ একাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি-ঘরে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এই ঘটনাগুলো ঘটে ৷

নিহতরা হলেন- বগুড়া কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকার শামছুল হকের ছেলে কলেজ ছাত্র মনিরুল ইসলাম (২২), গাবতলী উপজেলার গোড়দহ এলাকার মৃত মোনা সরদারের ছেলে জিল্লুর রহমান (৪৫) ও দিনাজপুর জেলার হিলির আনিছুর রহমানের ছেলে সেলিম (৪৫)। তিনি শহরের হরিগাড়ি এলাকায় বসবাস করতেন ৷ নিহত অপর একজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি ৷ নিহতদের মধ্যে কলেজ ছাত্র মনিরুল ইসলাম নওগাঁ জেলার বদলগাছী বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৬৫ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ১৫ জনকে বগুড়া ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০ জনকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

বগুড়ায় সকাল থেকেই অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে প্রথমে আওয়ামী লীগ ও পরে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় আন্দোলনকারীরা বগুড়া টিএনটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণ এবং পুলিশের টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা এলাকা।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের সাতমাথা এলাকায় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী সাতমাথা চত্বরে অবস্থান নেন। এসময় আন্দোলন সমর্থকরা সাতমাথায় প্রবেশের চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সাতমাথা চত্বর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এরপর তা আন্দোলনকারীরা দখলে নেয়। এসময় আওয়ামী লীগ কর্মীরা ধাওয়া খেয়ে সাতমাথা ত্যাগ করে। সাতমাথা চত্বর দখলে নেওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থাপনা এবং সড়কে থাকা মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় পুলিশ সার্কিট হাউস রোডে পুলিশ প্লাজার সামনে অবস্থান নিয়ে ছিল।  

আন্দোলনরতরা সাতমাথায় অগ্নিসংযোগ শেষে পিডিবি রোড হয়ে শহীদ খোকন পার্কের ভেতরে এবং সার্কিট হাউস রোড হয়ে ফুল মার্কেটের সামনে গিয়ে পুলিশের ওপরে ককটেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসয়ম পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দেয়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাতমাথা থেকে তাদের হটিয়ে দিয়ে বিভিন্ন সড়কের মুখে অবস্থান নেয়। থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলতে থাকে। আন্দোলনকারীরা স্টেশন রোড, শেরপুর রোড, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক ও গোহাইল রোড থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করতে ফাঁকা গুলি অব্যাহত রাখে। বেলা পৌনে ২টার দিকে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরাও সাতমাথা চত্বরে অবস্থান নেয়।

সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মোহনের কার্যালয় ও বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর বাসভবন ভাঙচুর চালানো হয়। পরে তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে টহলরত সেনা সদস্যরা শহরের কালিতলা এলাকায় সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর গাড়িতে দেওয়া আগুন নিভিয়ে ফেলে। সেনাসদস্যদের উপস্থিতিকে স্থানীয় জনতা স্বাগত জানিয়ে ‘এই মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার বলে স্লোগান দেন’।

অন্যদিকে বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় দুপুরে সংঘর্ষকালে আন্দোলনকারীরা থানা ভবনে হামলা চালায়। তখন পুলিশ গুলি চালায়। এতে কলেজ ছাত্র মনিরুল ইসলাম নিহত হন। আহত হন অন্তত ১২ জন। তাদের মধ্যে আট জন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকি চারজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে বিক্ষোভকারীরা নিহত মনিরুল ইসলামের মরদেহ নিয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদে হামলা চালায়।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় সংঘর্ষ চলাকালে থানা ভবনে আক্রমণের চেষ্টা চালানো হয়। পরে হামলাকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অন্তত চারজন নেতার বাড়িতে হামলা চালায়।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, হাসপাতালে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আহতদের মধ্যে মোট ৭৩ জন ভর্তি হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। এছাড়া হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয় ৷

তিনি বলেন, সেলিম নামে নিহত ব্যক্তির মরদেহ প্রথমে হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। কিন্তু সমর্থকরা পরে তার মরদেহটি নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত আনসাররা বাধা দিয়েও ব্যর্থ হয়। মরদেহটি ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৪
কেইউএ/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।