ময়মনসিংহ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন আনোয়ারকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্রশাসনের উপস্থিতিতে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ।
জানা গেছে, রোববার (৪ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজ ব্যানারে শিক্ষকদের একটি অংশ মানববন্ধন ও মিছিল করে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারিক বিন আনোয়ার প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপস্থিত হন। এ সময় নিজের মোবাইল ফোন বের করেন তিনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম সেটি কেড়ে নেন। আনোয়ার বাকৃবির শিক্ষার্থী কিনা জিজ্ঞেস করেন। বাকৃবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেন আনোয়ার।
এ সময় আওয়ামীপন্থী কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে শিবিরের লোক বলে চিৎকার করেন। এ সময় ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসানের নির্দেশে সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে আনেয়ারকে মারধর শুরু করেন।
এ সময় ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম, সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আফরিনা মুস্তারি এবং আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন।
পরে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান অন্যান্যরা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তারিক বিন আনোয়ার জানান, হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি মাথায় লাথি ও শরীরে কিল ঘুষি মেরেছে। হাতের ওপরের কাঁধে তুলনামূলক ব্যাথা বেশি পেয়েছি। তবে মাথার আঘাতটা বেশি গুরুতর। আমার ওপর চারদিক থেকে হামলা হওয়ায় হামলাকারীদের নাম বলতে পারছি না। তবে পরিচিত মুখের মধ্যে ফজলুল হক হলের ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ছিল এবং ঈশা খাঁ হলের মো. সায়েদুল মুরসালিন নিবিড় এবং মাহমুদুল আল হাসান মুরাদ মারধর করেছে এইটুকু চিনতে পেরেছি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা জানান, তারিক বিন আনোয়ারকে ছাত্রলীগ প্রশাসনিক ভবনের সামনে মারধর করে। তাকে মারধর করার সময় সেখানে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন৷ কিন্তু তারা নীরব ভূমিকা পালন করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং শিক্ষকদের এই নীরব ভূমিকাকে ধিক্কার জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে এখন হলগুলোয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। অবিলম্বে ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসমুক্ত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, আমরা যখন শিক্ষকদের সাথে আন্দোলনে ছিলাম তখন দেখলাম সহকারী প্রক্টররা একজন ছেলেকে করিডোর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে জানতে পারি সে ফোনে ভিডিও করছিল, তাই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমি আর কিছু জানি না। আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, সকাল সাড়ে দশটার দিকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রশাসন ভবন সংলগ্ন আমতলার কাছাকাছি বসে ছিলাম। তখন আমাদের কর্মসূচি শুরুও হয় নাই। এসময় একটি ছেলে এসে কিছুটা দূর থেকে আমাদের জমায়েতের ছবি তুলতে থাকে। আমরা তৎক্ষণাৎ দূর থেকেই তার পরিচয় জানতে চাই। আমাদের প্রশ্ন করা শুনে ছেলেটি দৌড়ে পালাতে থাকে। সন্দেহের কারণেই উপস্থিত জমায়েত তখন তাকে ঘেরাও করে। পরে আমি ছেলেটির কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি যে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্র ইউনিয়ন বাকৃবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক। কিছুক্ষণ পরে তাকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে তুলে দিই।
এসময় ছাত্রলীগ দ্বারা মারধরের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমাদের সাথে থাকা অবস্থায় তার সাথে কোনোরকম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে নাই। এমনকি সেসময় ছাত্রলীগের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলো না। প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়ার পরে কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটি আমার জানা নেই। তবে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে বিনা অনুমতিতে আমাদের কর্মসূচির ছবি তোলার বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী প্রক্টর ড. সব্যসাচী বলেন, দূর থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে কিছু একটা ঝামেলা হচ্ছে। পরে ঘটনাস্থলে (উপাচার্যের কার্যালয়ের নিচে) গিয়ে জানতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে নিয়েই কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। তবে এখানে কে কোন দলের বা মতদর্শের সেটি আমার জানা নাই। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীর সুরক্ষার জন্য তাকে রিকশায় তুলে দিই চলে যাওয়ার জন্য। ছেলেটিকে মারধর করা হয়েছে কি না এ ব্যাপারে আমি সঠিক কিছু জানি না। আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি পুরোটা সময় সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান তিনি।
তবে ঘটনার বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলামকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৪
এমজে