বরিশাল: স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের পর দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, তাদের উপাসনালয় ভাঙচুর, ভিন্ন মতের লোকদের ওপর হামলা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও ঘর বাড়িতে হামলা এবং সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও ভাংচুরের প্রতিবাদে প্রতিবাদ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে সমন্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রিয় বরিশালবাসী, ছাত্র-ছাত্রী সহযোদ্ধা বন্ধুগণ, আমরা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম, প্রতিবাদ প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করেছি।
প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী ভাই ও বোনেরা- আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের বিজয় অর্জনের পরেই দেশে অরাজকতা, নাশকতা করছে, ফ্যাসিস্ট এবং তাদের দোসররা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের স্থাপনায় হামলা হচ্ছে, ভাঙচুর হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যারা বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এমনটা করছে তাদের সাথে আমাদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং তারা আমাদের সকলের শত্রু। আমরা মনে করি আমাদের ছাত্র নাগরিকদের যে অভ্যুত্থান তাকে নস্যাৎ করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ যেন রাষ্ট্রীয় সম্পদ, স্থাপনা, দোকানপাট, বাড়িঘরে আগুন দিতে না দিতে পারে, সে জন্য আমরা বরিশালের মুক্তিকামী ছাত্র জনতাকে সজাগ দৃষ্টি এবং সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি ।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ- দেশে যে অরাজকতা হচ্ছে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। সে জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট আহ্বান জানাচ্ছি, দেশে আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিন। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য আমরা মুক্তিকামী ছাত্র জনতা রাজপথে থাকবো । ইনশা আল্লাহ!
প্রিয় সহযোদ্ধা শিক্ষার্থী ভাই ও বোন- আমরা রক্ত দিয়েছি, শহিদ হয়েছি। আমাদের যে প্রতিশ্রুতি নতুন বাংলাদেশ গঠন করার জন্য। সেটি আমাদের অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ তা রক্ষা করতে হবে।
প্রিয় বরিশালবাসী - এই রাষ্ট্র আমাদের । আমার আপনার টাকায় গড়া। মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ কোনো স্বৈরাচারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় । রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা আমাদের নৈতিক, মানবিক ও ঈমানী দায়িত্ব ।
প্রিয় সহযোদ্ধা শিক্ষার্থী ভাই ও বোন এখন সময় দেশ গড়ার! নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের, এখন সকলে মিলে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণের সংগ্রামে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতি রক্ষায় শপথ নিবো ।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মো. মহিউদ্দিন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ ছিল এবং যে বিজয় অর্জন হয়েছে তার কোন রকম ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে ভবিষ্যতেও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলমান রাখবো।
তিনি বলেন, আমরা সংবাদ পেয়েছি আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা শঙ্কায় রয়েছে, সাংবাদিক ভাইদের ওপরও হামলা হচ্ছে, আমরা প্রতিটি বিষয়ে নিন্দা জ্ঞাপন করছি। আমাদের এই প্রোগ্রামের মধ্যেই বগুরা পুলিশ ফাঁড়িতে সেচ্ছাসেবক টিম পাঠিয়েছি, যাতে কেউ সেখানে কোন সহিংসতা করতে না পারে। আমাদের ভাইয়েরা গতরাতে না ঘুমিয়ে সংখ্যালঘুদের স্থাপনা পাহারা দিয়েছে। আমরা কোনো সহিংসতা চাইনা।
এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকায় সাধুবাদ জানিয়ে মো. মহিউদ্দিন বলেন, আপনাদের বিষয় আমরা বুঝি, যেমন আমাদের অনেক শিক্ষক চাইলেও আমাদের সাথে থাকতে পারিনি, তবে পক্ষে থেকে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, সেইসাথে দোআসহ অনেক সহযোগিতাও করেছেন। আমরা বিজয় পেয়েছি এখন সবাই মিলে সোনার বাংলা গড়বো। আর আপনাদের মাধ্যমেই সংবাদগুলো প্রচার হয়েছে। আমরা আপনাদের পাশে আছি, আপনারাও আমাদের পাশে ছিলেন ভবিষ্যতে থাকবেন। এখন আপনাদের কথা বলতে কোন বাধা নেই।
অপর সমন্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর পরে গতকাল আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, এর পরপরই কিছু দল বা গোষ্ঠী বা স্বৈরাচারীর দোসররা বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করেছে, বাড়ি-ঘরে হামলা করেছে। আমরা জানতে পেরে সেসকল জায়গা পরিদর্শন করেছি এবং নিরাপত্তা দেয়াড় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আর আমাদের আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়েছে, তাই সেখান থেকেই এ আন্দোলন বন্ধ হওয়া বা চলমান থাকা নিয়ে ঘোষণা করা হবে।
এসময় তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে, প্রয়োজনে তাদের সাথে কোথাও যেতে হলে তাও যাবো আমরা।
সমন্বায়ক লাবণ্য রহমান আমরা কলম ধরেছি যে হাতে সে হাতে কখনও অস্ত্র ধরবো না। সহিংসতা করে কিছু সুবিধাবাদী ছাত্র সমাজকে দায়ভার দিতে চাচ্ছে, তা আমরা কখনো নিব না। কারণ আমাদের ছাত্রসমাজের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ, যা সারা বিশ্ব দেখেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আমাদের, এগুলো ধ্বংস করতে বা অরাজকতা সৃষ্টি করলে আমরা তাদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য রাজপথে থাকবো।
এসময় শহিদ হওয়া শিক্ষার্থীদের রুহের মাগফিরাত ও আহত শিক্ষার্থীদের সুস্থতা কামনা করে সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গির কবির বলেন, ছাত্রজনতা প্রমাণ করে দিয়েছে তাদের ঐক্যের বিরুদ্ধে কোন শক্তি টিকে থাকতে পারে না। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেইসাথে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সবকিছু সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক করার জন্য প্রশাসনকে সহযোগিতা করার কথাও বলেন তিনি।
এসময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বায়ক সিরাজুল ইসলামসহ বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বায়করা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২৪
এমএস/এমএম