ঢাকা: রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালে বিদ্রোহের ঘটনার পর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) অনেক সদস্যকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। তারা চাকরিচ্যুত প্রত্যেককে পুনরায় পরিবর্তিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) ফিরিয়ে তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার দাবি জানান।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ ও স্বৈরাচার কর্তৃক চাকরিচ্যুত ক্ষতিগ্রস্ত সকল বিডিআর সদস্য’র ব্যানারে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের হেডকোয়ার্টার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নাম দিয়ে একটা অপ্রত্যাশিত নীরবে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড সরাসরি তৎকালীন ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ সরকারের সরকার প্রধান ও কিছু এমপি-মন্ত্রীর ইন্ধনে সংঘটিত হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড সুস্থ ও সূক্ষ্ম জ্ঞানে তৎকালীন সরকারের পরিকল্পনায় ভারতীয় সৈন্য পিলখানায় অনুপ্রবেশ করে ঘটায়। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরে ঘটনার আলামত হিসেবে ভারতীয় অস্ত্রের সিলিং এবং গ্রেনেড সংরক্ষণ করা হয়, যা তদন্ত কমিশন ও বিচারিক আদালত তৎকালীন ক্ষমতায় থাকা সরকারকে বাঁচানোর জন্য আমলে নেয়নি।
তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পিলখানাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থাপনার প্রায় ১৮ হাজার ৫১৯ জনের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। তারা চাকরিচ্যুতিসহ জেল-জুলুম ও অত্যাচারের শিকার হন এবং এখনো অনেকে কারাগারে আছেন।
এসময় তারা নিজেদের দাবি জানিয়ে আরও বলেন, যেসব বিডিআর সদস্য ২০০৯ সালে পিলখানার মিথ্যা বিডিআর বিদ্রোহের দায়ে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন এবং বর্তমানে কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এখনো বসবাসরত অবস্থায় আছেন, আমাদের প্রত্যেককে পুনরায় বিজিবিতে ফিরিয়ে এনে আমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু ফিরিয়ে দেওয়ার এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এখনো যেসব বিডিআর সদস্য কারাগারে আছেন তাদের প্রত্যেককে অবিলম্বে সাজা মওকুফ করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি ।
এসময় তারা রাষ্ট্রপতি, অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমানবাহিনী প্রধান, বিজিবি প্রধান, পুলিশপ্রধান, আনসার বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সুশীল সমাজ, সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন রিয়াজ উদ্দীন, শফি আহমদ, আরিফ হোসেন, রেজাউল করিম, হাবিবুর রহমান, সোলায়মান মিয়া, মো. ইসহাক, মো. রায়হান প্রমুখ।
শাহবাগেও মানববন্ধন
এদিকে দুপুরে শাহবাগেও মানববন্ধন করেছেন তৎকালীন বিডিআরের কিছু সদস্য। সেখানে বক্তব্য রাখেন আব্দুল বাছেদ, আতাউর রহমান, মো. আব্দুর রশিদ, ইয়াদুল হক, জসিম উদ্দিন, শামীম খান, আহসান হাবীব প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি আমরা আমাদের কর্তব্য ঠিক মতো পালন করছিলাম। হঠাৎ করে আমাদের বলা হয়, সেনাবাহিনী তোমাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করছে, তোমরা প্রস্তুত হও। আমরাও প্রস্তুত হই এবং বিভিন্ন ধরনের ফায়ার করি। ফায়ারের কারণে আমাদের দুইটা ক্ষতি করা হয়েছে। এক চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, অন্যদিকে জেল খাটানো হয়েছে। আমরা কোনো মানুষকে মারিনি, শুধু আমরা ফায়ার করেছি।
তারা বলেন, আমাদের সব প্রাপ্য আমাদের ফেরত দিতে হবে। আমাদের চাকরিতে আবারও পুনর্বহাল করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের হক থেকে বঞ্চিত করেছে। আমরা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জোর দাবি জানাই, যেন আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয় এবং আমাদের সম্মান ফেরত দেওয়া হয়। আমরা না খেয়েও দিনযাপন করেছি। বিশেষ করে, যখন আমরা জেলে ছিলাম তখন আমাদের পরিবার অসহায়ের মত জীবনযাপন করেছে। এমনও দিন গিয়েছে, আমাদের পরিবারের লোকজন না খেয়ে থেকেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২৪
এমএমআই/ইএসএস/এইচএ/