ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনায় কোনো মন্দিরে হামলা হয়নি: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
খুলনায় কোনো মন্দিরে হামলা হয়নি: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট

খুলনা: বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট খুলনা মহানগর ও জেলার নেতারা বলেছেন, খুলনা মহানগর ও জেলায় কোনো মন্দিরে হামলার একটি ঘটনাও ঘটেনি। বেশ কিছু হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘের দখলের মতো ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারেন।

তবে সেসব হামলা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার কারণে হয়নি। এই ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে তারা অন্যদের প্রতি যে সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুম নির্যাতন করেছিল; তারই প্রতিশোধ হিসেবে বিক্ষুব্ধ জনতা এসব হামলা করেছে। একটি বিশেষ মহল হিন্দুদের রাজপথে নামিয়ে নিজেদের সংকট পার হতে চেষ্টা করছে।

সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে খুলনার একটি অভিজাত হোটেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতারা।

সংগঠনটির খুলনা জেলার আহ্বায়ক ডা. প্রদীপ দেবনাথের সভাপতিত্বে প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফ্রন্টের মহানগর শাখার সদস্য সচিব প্রকৌশলী সত্যানন্দ দত্ত। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক জয় বৈদ্য ও প্রিয়াঙ্কা দেবনাথ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

প্রদীপ দেবনাথ বলেন, ছাত্র-জনতার অসামান্য আত্মত্যাগের ফলেই দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে গলাটিপে হত্যা করে কায়েম করা একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটেছে। জাতি এইসব বীর শহীদদের ঋণ কোনো দিন ভুলবে না। যে কোনো বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পরে সেখানে নানা রকম ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিশ্বের সকল দেশে সকল বিপ্লবের পরে এক ও অভিন্ন চিত্র দেখা যায়। নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অকার্যকর ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। আইন ও সংবিধান লঙ্ঘনের এক প্রবণতা দৃশ্যমান থাকে, কখনো স্বল্প কখনো দীর্ঘ সময়কাল পর্যন্ত। শাসক ও শোষক শ্রেণির প্রতি নির্যাতিত নিষ্পেষিত শোষিত বঞ্চিত মানুষের ক্ষোভ, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার নানা বীভৎস রূপ ধরা পড়ে। দীর্ঘ সাড়ে ১৬ বছরের স্বৈরাশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর চরম নিষ্পেষিত বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে। যার ফলশ্রুতিতে সারা দেশেই হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের অসংখ্য ঘটনা ঘটে। চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী শাসকের দোসরের ভূমিকা পালন করায় পুলিশের প্রতি জনতা ছিল চরমভাবে ক্ষুব্ধ। ফলে দেশের নানা স্থানে পুলিশের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে। সরকারের পতনের পর কার্যত সারা দেশের থানাগুলো পুলিশ শূন্য হয়ে যায়। নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগে সমাজের একটি গোষ্ঠী ডাকাতি ও লুটপাটের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়। রাজনৈতিক মতভিন্নতা কিংবা অতীতে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নয়, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট করাই যাদের লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর খুলনা মহানগর ও জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কিছু সংঘাত, সহিংসতা, লুটপাট ও দখলের ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও বসতবাড়িতে হামলা লুটপাট হয়েছে। বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমাজকর্মীরা উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাত-দিন এলাকায় এলাকায়, পাড়া মহল্লায় পাহারা দিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে জনগনের জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় তাদের নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে তাদের প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত রেখেছেন। তারপরও কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সব ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেখানে মুসলমান, হিন্দু বা খ্রিস্টান বলে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ফ্যাসিবাদী শাসকের পতনের পরপরই একটি গোষ্ঠী বা মহল অন্য সব সহিংস ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে বলে পরিকল্পিত প্রপাগান্ডায় লিপ্ত হয়েছে। মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িতে লুটপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি অভিযোগ আসছে নানা মিডিয়ায়। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি গোষ্ঠী এসব সাজানো প্রতিবেদন ভাইরাল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।

প্রদীপ দেবনাথ আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আপনাদের জানাতে চাই, খুলনা মহানগর ও জেলায় কোনো মন্দিরে হামলার একটি ঘটনাও ঘটেনি। বেশ কিছু হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘের দখলের মতো ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে সে সব হামলা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার কারণে হয়নি। এই ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে তারা অন্যদের প্রতি যে সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুম নির্যাতন করেছেন, তারই প্রতিশোধ হিসেবে বিক্ষুব্ধ জনতা এসব হামলা করেছে। আমরা লক্ষ্য করবেন যে, হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় কোনো এলাকায় যদি ১০ জন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন, সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হয়তো একজন। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করার, মিথ্যা প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই।

রাজপথে আন্দোলনরতদের দাবির প্রতি একমত পোষণ করে ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ বলেন, শত শত শহীদের বুকের তাজা রক্ত আর লাখো ছাত্র জনতার অভূতপূর্ব লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে বিজয় এসেছে বাংলার মাটিতে, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ বিতর্কিত ও সমালোচিত করতে একটি গোষ্ঠী উঠে পড়ে লেগেছে, যাদের ইন্ধন দিচ্ছে বিদেশি একটি মহল। যারা বাংলাদেশের শান্তি, উন্নতি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চায় না। বাংলাদেশকে যারা তাদের করদ রাজ্য বানিয়ে রাখতে চায়। তাদের স্বার্থ উদ্ধারের পথ বানিয়ে রাখতে চায়। আমার তাদের এহেন তৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে এই ঘৃণ্য তৎপরতা থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে বলতে চাই, অন্যথায় বাংলাদেশর সব সম্প্রদায়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাদের মোবাবিলা করবে। আমাদের অর্জিত সাফল্যকে কোনো কুচক্রী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির অপতৎপরতার কাছে আমরা ম্লান হতে দিতে পারি না।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ফ্রন্টের নেতা ব্রজেন ঢালী, সুজানা জলি, তপন কুমার ঘোষ, উজ্জ্বল কুমার সাহা, সুজিত কুমার মন্ডল, উজ্জল দাস, ইঞ্জিনিয়ার মানষ মন্ডল, রমেন রায়, অমিত মল্লিক, সত্যেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, তপন কুমার মন্ডল, দেবদাস বিশ্বাস, চন্দ্রজিৎ বৈরাগী, নিলোৎপল নিলয়, রাজু কুমার দাস, গৌড় বিশ্বাস, কৃষ্ণ বিশ্বাস, দীপ নারায়ণ, বিশ্বজিৎ গোলদার ও রতন মল্লিক প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।