টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে শিক্ষার্থীদের হাতের স্পর্শে প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন অলিগলি ও সড়কের ময়লা-আবর্জনা সরে গেছে। শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সড়কে ফিরেছে শৃঙ্খলা।
যে শিক্ষার্থীরা রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার বদল করেছেন, তারাই এখন শহরের ক্ষত সারানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। লাঠি হাতে বিশৃঙ্খল নগরে ট্রাফিকের শৃঙ্খলা সামলাচ্ছেন তারা। ঝাড়ু হাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন আবর্জনা। পুলিশের গুলিতে ছাত্রের শরীরের রক্তিম দেয়াল নানা আল্পনায় ফুটিয়ে তুলছেন অনেকে। ছিনতাই-ডাকাতি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। বাজারে দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট-চাঁদাবাজি রুখে দিচ্ছেন। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন অভাবনীয় উদ্যোগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন এক শহরের দেখা পেয়েছেন বাসিন্দারা। বিভিন্ন সড়কে গত কয়েকদিনের তুলনায় যান চলাচল বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা যা করে দেখাচ্ছে, সেটি অনুকরণীয়। শহরের নিরালা মোড়, শান্তিকুঞ্জ মোড়, প্রেসক্লাব, আদালত প্রাঙ্গণসহ জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা সামলাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সংবাদ সম্প্রচারে সাহসী ভূমিকা রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ টাঙ্গাইল ছাত্রসমাজের দেয়াল লিখনে স্থান পেলেন সাংবাদিক নওশাদ রানা সানভী। তিনি টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সদস্য ও সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি।
পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ ও মুগ্ধর ছবি আর নানা স্লোগান সম্বলিত দেয়াল লিখনে সাংবাদিক নওশাদ রানা সানভীর ছবিকে স্থান দেওয়ার প্রশংসা করেছেন টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনসহ জেলার সংবাদকর্মীরা।
চিত্র শিল্পী মিরাজ বলেন, টাঙ্গাইলে অন্যতম সাহসী সাংবাদিক সানভী পত্রিকায় কাজের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে দেশবাসীর কাছে। সব মুহূর্তের ভিডিওই প্রচার করেছে এবং শিক্ষার্থীদের বট গাছের মতোই ছায়া দিয়েছে। কখনো হামলাকারীদের বাধা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হলে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেছে এক কথায় মানুষের মনে প্রতিবাদী ও সংবাদকর্মী হিসেবে সর্বোচ্চ জায়গা দখল করেছে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী মো. জাওয়াদ সরকার বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতার সূর্যটাকে সমুন্নত রাখতে রাস্তাঘাটে ট্রাফিকিং, সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং, যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ডাকাত দল রুখতে এলাকাভিত্তিক নজরদারি এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেয়ালে দেয়ালে সৃজনশীলতার বিকাশ অব্যাহত রেখেছি এবং নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি সবাই মিলে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশটা প্রকৃত পক্ষেই বৈষম্যমুক্ত হোক, গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা হোক, দেশে প্রকৃত পক্ষেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাক, শিক্ষিত এবং যোগ্য নেতার নেতৃত্বে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি মুক্ত একটি সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হোক। ক্ষমতার প্রতিযোগিতা না হোক, সম্পর্ক হোক সহযোগিতার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইফফাত রাইসা নূহা বলেন, যানজটমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত এবং সন্ত্রাসমুক্ত একটি সুন্দর শহর হোক। আন্দোলন ও তার পরবর্তী সময়ে আমরা যারা একসঙ্গে কাজ করছি তাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি। তাদের সমস্যা শুনছি। সমাধানের চেষ্টা করছি। মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি।
টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ জানান, সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলের সংগ্রামী শিক্ষার্থীরা ত্যাগ স্বীকার করে রাষ্ট্র গোছানোর জন্য দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এক নতুন বাংলাদেশ হবে। এদিকে সাংবাদিক সানভীর স্বীকৃতি আমাদের সম্মানিত করেছে। বিজয়ী বীরদের টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব তথা সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে অভিনন্দন।
প্রতিটি ভালো কাজে ভবিষ্যতে ছাত্রসমাজের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
আরএ