ঢাকা: পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর চাকরিচ্যুত সাবেক বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিডিআর) ৭৬তম ব্যাচের সদস্যরা পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।
রোববার (১৮ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে এ দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে চাকরিচ্যুত সাবেক বিডিআর সদস্যরা বলেন, আমরা ৭৬তম ব্যাচের ৫১৬ জন সদস্য বাংলাদেশ রাইফেলসের সর্ব কনিষ্ঠ ব্যাচ ছিলাম। যে ব্যাচটি ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হই। তদুপরি আমরা ২০০৯ সালের ১১ জানুয়ারিতে থেকে চট্টগ্রামে অবস্থিত রাইফেলস ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং শুরু করি। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস হেডকোয়ার্টার পিলখানায়- ৎবিডিআর বিদ্রোহের নামে একটি অপ্রত্যাশিত নীরব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ড তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের সরকার প্রধান ও কিছু এমপি-মন্ত্রীদের ইন্ধনে সংঘটিত হয়েছিল যেটি আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত। এটি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, বরং এটি একটি ভিন দেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। সেই চক্রান্তের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একগুচ্ছ চৌকস ও দেশপ্রেমী সেনা অফিসারকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে একটি অস্থিতিশীল, অরাজকতা, নির্বিচারে গুম, খুন, রাহাজানি, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়।
তারা আরও বলেন, আমরা ৭৬ তম ব্যাচ ২৫ ফেব্রুয়ারি অন্য দিনের ন্যায় সারাদিন প্রশিক্ষণের সব কাজ সঠিকভাবে গ্রহণ করি। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমরা কোনোভাবেই অবগত ছিলাম না। তদুপরি পরের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল বেলায় আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড সঠিকভাবেই চলতে থাকে। দিনের প্রথম অধ্যায়ের শেষাংশে হঠাৎ বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাতে করে আমরা ভীত হয়ে পড়ি। অন্যদের দৌড়াদৌড়ি দেখে আমরাও এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকি। পরে আমরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যারাক এ অবস্থান করি।
তারা বলেন, আমরা রিক্রুট থাকা অবস্থায় প্রশিক্ষকদের আদেশ ছাড়া নিজেদের মতো করে কোনো কাজ বা চলাফেরা করতে পারতাম না। আমাদের যা কিছু করানো হতো সব কিছুই ট্রেনিং এর অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারির পর কয়েক দিন ট্রেনিং বন্ধ থাকলেও পুনরায় আবার ট্রেনিং শুরু হয়। কিন্তু আমাদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ করে বিভিন্ন মেয়াদে পর্যায়েক্রমে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার ৭৬তম ব্যাচকে বাতিল করে ক্ষান্ত থাকেননি, বরং ৭৬তম ব্যাচের এসব সদস্যকে অন্য কোনো বাহিনীতে চাকরি নেওয়ার কোনো সুযোগ রাখেননি। পরবর্তীতে আমাদের অন্যকোনো সরকারি চাকরিতে চাকরি হলেও পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে আমাদেরকে বাতিল করা হয়েছে।
আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, বিজিবি মহাপরিচালকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, ২০০৯ সালের পিলখানা বিদ্রোহের নামে, বিদ্রোহের দায়ে মিথ্যা ও অন্যায়ভাবে ৭৬তম ব্যাচের ৫১৬ জন সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের প্রত্যেক সদস্যকে পুনরায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবিতে (তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেল্স) ফিরিয়ে এনে আমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এ মানববন্ধনের মাধ্যমে আবেদন জানাই।
এ সময় সাবেক বিডিআর এর চাকরিচ্যুত ৭৬তম ব্যাচের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
এসসি/জেএইচ