ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের ৮ জন নিহত হয়েছেন  

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের ৮ জন নিহত হয়েছেন  

ফরিদপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা এবং ঢাকায় অবস্থানকারী বিভিন্ন এলাকায় শিশুসহ ৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ফরিদপুর সদর উপজেলায় এক গ্যারেজ মিস্ত্রিসহ ৩ জন, ভাঙ্গা উপজেলার দুই শিশু ও এক কলেজ শিক্ষার্থীসহ ৩ জন, মধুখালী উপজেলায় এক আনসার সদস্য ও বোয়ালমারী উপজেলায় এক আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী।

 

নিহতদের পরিবার ও এলাকা সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আনসার সদস্য জুয়েল শেখ (২৪) ফরিদপুরে মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের পার আশাপুর গ্রামের মৃত আকিদুল শেখের ছেলে।  

জুয়েল ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর অঙ্গীভূত আনসার সদস্য হিসেবে ডিএমপিতে যোগদান করে মতিঝিল থানায় অঙ্গীভূত আনসার সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন জুয়েল শেখ। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাতে ঢাকা ফকিরাপুল এলাকায় ডিউটি শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে মতিঝিল থানায় আসছিলেন জুয়েল শেখ। পথে একদল নাশকতাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলার সময় তার (আনসার সদস্য জুয়েল) শরীরে গুলি লাগে। দ্রুত তাকে তার সহকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  

পরিবারের সদস্যদের খবর পেয়ে পরেরদিন ২০ জুলাই তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি মধুখালীর আশাপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। গ্রামের বাড়িতে জুয়েলের বৃদ্ধা মা নাজমা বেগম, স্ত্রী শ্রাবণী আক্তার ও ৫ বছর বয়সী ছেলে হুরাইরা রয়েছে। এর আগে পড়ালেখা শেষে আনসার ট্রেনিং শেষে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর অঙ্গীভূত আনসার সদস্য হিসেবে ডিএমপিতে যোগ দেন। তিনি ২০১৭ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন পার্শ্ববর্তী এলাকার শ্রাবণী খাতুনকে।

কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ফরিদপুর সদর উপজেলার সিএন্ডবি ঘাট এলাকার কাউজদ্দিন মুন্সিডাঙ্গীর বাসিন্দা শফি মাঝির ছেলে সিরাজুল ইসলাম পেশায় একজন গ্যারেজ মিস্ত্রি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরপরই তিনি গত ৫ আগস্ট বিকেলে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় গ্যারেজে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে বৈষম্য আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা ও পুলিশের সংঘর্ষে নিহত হন তিনি।

এছাড়া ফরিদপুর পৌর শহরের গোয়ালচামট মোল্লাবাড়ি সড়কের বাসিন্দা জেলা বিএনপি নেতা জান শরীফ মিঠু (৪৬) তার স্ত্রী ঢাকার উত্তরা এলাকায় চাকরির সুবাদে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। গত ১৯ জুলাই ঢাকার উত্তরা থেকে জুমার নামাজ শেষে তিনি বাসায় ফেরার পথে ছাত্র-জনতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে মারা যান জান শরীফ মিঠু।

অপরদিকে গত ৫ আগস্ট বিকেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছাড়ার খবর ফরিদপুর জেলায় ছড়িয়ে পড়লে কোতোয়ালি থানায় হামলা করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পুলিশ থানার মধ্যে আটক পড়লে গুলি-টিয়ারশেল ছুড়তে ছুড়তে থানা থেকে বের হওয়ার সময় ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর এলাকার গাড়ি চালক শামচু শেখ নামে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

এদিকে ফরিদরের ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের খাঁপুরা গ্রামের রিক্সা চালক জুয়েল শিকদার জীবিকার তাগিদে ঢাকার রামপুরা এলাকায় বসবাস করতেন। জুয়েল শিকদারের ছেলে ও রামপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম শিকদার (১০) গত ১৯ জুলাই বাসার পাশের খেলার মাঠে ফুটবল খেলছিল। ওই সময় রামপুরা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় তামিম।  

ওইদিন (১৯ জুলাই) জেলার ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হাসান ঢাকা আয়কর অফিসের উচ্চমান সহকারী। তিনি চাকরির সুবাদে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানার রায়েরবাগ এলাকার একটি ১১ তলা ভবনের ৮তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। গত ১৯ জুলাই বিকেলে বেলকুনিতে আবুল হাসানের ছেলে আব্দুল আহাদ (৪) খেলাধুলা করা অবস্থায় চোখে গুলি লেগে ভবনের মেঝেতে নুয়ে পড়ে। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন রাতে সে মারা যায়।  

এছাড়া একইদিন ১৯ জুলাই জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের ভদ্রাসন গ্রামের বাসিন্দা ঠিকাদার কামরুল হাসান ফারুক ব্যবসার সুবাদে ঢাকার আজিমপুর কলোনিতে বসবাস করেন। ওইদিন বিকেলে কামরুল ইসলামের ছেলে ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ (১৭) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিল যায়। এ সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তার বুকে গুলি লাগে। গুলিতে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কদমী গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ বাকিয়ার মোল্লা (৪০) ঢাকায় কাপড়ের ব্যবসা করার সুবাদে ঢাকা মহানগর উত্তরের নিউমার্কেট এলাকায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর নিউমার্কেট এলাকার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ছিলেন। গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ জুলাই বাকিয়ার মোল্লা মারা যান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ