নোয়াখালী: নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় বন্যার পানি ঘরে ঢুকে আইপিএস নষ্ট হওয়ায় সেটি মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কাকন কর্মকার (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কাকন কর্মকার উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের হারাধন কর্মকারের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, গত সাতদিনের টানা বৃষ্টি ও ফেনীর মুহুরী নদীর পানি নোয়াখালীতে ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এরপর অতি বৃষ্টির কারণে কাকনদের বসতঘরে পানি উঠে যায়। এতে নষ্ট হয় আইপিএস। বুধবার সন্ধ্যার দিকে আইপিএস মেরামত করতে গিয়ে অসাবধনাবসত আইপিএসের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে ঘটনাস্থলেই কাকনের মৃত্যু হয়।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে টানা ভারী বর্ষণ ও ফেনীর মুহুরী নদী থেকে ধেয়ে আসা বানের পানির কারণে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। এতে সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এছাড়া গ্রামীণ সড়কে সব ধরনের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষেরা।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে পুনরায় নোয়াখালীতে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এতে স্থানীয়দের মাঝে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি আপাতত বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ ৮ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানিতে নোয়াখালীর সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও পৌর এলাকায় ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানান, গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নোয়াখালীতে ১৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সক্রিয় লঘুচাপ ও মৌসুমি জলবায়ু কারণে জেলায় আরও তিন দিন ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন জানান, জেলায় ৭ লাখ ৭৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি অনেক এলাকায় মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বেগমগঞ্জের একটি উপকেন্দ্রেও পানি উঠে গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলায় বন্যা হয়েছে। এসব উপজেলায় ইতোমধ্যে ৩৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩৬ হাজার বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আমরা শুকনো খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি।
আমাদের উপজেলার কর্মকর্তাবৃন্দ মাঠে কাজ করছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। আমরা বিত্তশালী মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে আমরা চাহিদার কথা জানিয়েছি।
তিনি আরও জানান নোয়াখালীতে প্রথমে জলাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তা নোয়াখালীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সে কারণে নোয়াখালীতে বন্যা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৪
আরএ/এসআই