ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিদিন শিক্ষকদের ৪-৫টা বড় দাবি আমার কাছে আসে: শিক্ষা উপদেষ্টা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২৪
প্রতিদিন শিক্ষকদের ৪-৫টা বড় দাবি আমার কাছে আসে: শিক্ষা উপদেষ্টা

ঢাকা: অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো অনেক নিচের দিকে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আমরা শিক্ষকদের দাবি পূরণের চেষ্টা করবো। কিন্তু তাদের দায়িত্বের জায়গা থেকেও জবাবদিহিতা এবং নজরদারি থাকতে হবে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবেস শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায়, বিশ্বিবদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ এবং ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের প্রধান।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, প্রতিদিন অতন্ত চার-পাঁচটা বড় বড় দাবি আমার কাছে আসে। কিন্তু তারপরও আমি বিরক্ত হই না। আমি নিজেকে অপরাধী মনে করি তাৎক্ষণিক সমাধান দিতে পারি না বলে, নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাই।  এদেশের পুরো শিক্ষকতা পেশা, বিশেষভাবে উল্লেখ করবো বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা অন্য সমতুল্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অবহেলিত এবং উপেক্ষিত। স্বল্প আয় দিয়ে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাই তাদের পক্ষে দুঃসাধ্য। শিক্ষকতায় মনোযোগ দেবেন কী করে। সরকারি সাহায্যের স্কুলগুলোর বাইরেও অনেক অসংখ্য শিক্ষক আছেন, যারা বলতে গেলে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।  

শিক্ষায় ব্যয় বাড়ানো নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বড় সমস্যা সরকারের রাজস্ব আয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিম্নতম পর্যায়ে। যে কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ও অতি কম। তারপরও আমি মনে করি অপচয় এবং দুর্নীতি কমানো গেলে এসব খাতের ব্যয় বাড়ানো সম্ভব। সেই চেষ্টা এক দিনে হবে না। কিন্তু আমরা করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পদায়ন করা কঠিন কাজ

উপদেষ্টা বলেন, আমাদের শিক্ষার অনেক প্রসার হয়েছে। কিন্তু অনেকটাই অপরিকল্পিত। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো তৈরি করেছি আমরা, সেই ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এতদিন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছিল। আমি তার মধ্যে ৪৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কষ্টে ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রত্যেকটি সিভি দেখে দেখে পদায়ণ করছি। এটা যে কত কঠিন কাজ সেটা বোঝা কঠিন। এজন্য আরও ১০-১২টা বিশ্ববিদ্যালয় বাকি রয়ে গেছে। আমরা যে এত বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছি, গ্রাজেুয়েট তৈরি করছি তার সঙ্গে কর্মসংস্থানের যোগসূত্র তৈরি করতে পারিনি। একারণে শিক্ষিত বেকারের সমস্যা এখন চরম আকার ধারণ করেছে।

শিক্ষা সংষ্কার কমিশন

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের একটা জাতীয় শিক্ষানীতি থাকা দরকার। কিন্তু পরিকল্পিত, আধুনিক এবং দেশের উপযোগী জাতীয় শিক্ষানীতি তো দূরের কথা আমরা অন্তর্বর্তী সরকারে এসে স্কুলের শিক্ষাক্রম নিয়ে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে পড়েছি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে স্কুলের পাঠ্যবইগুলোতে নতুন দেশ গড়ার একটা প্রত্যয় প্রতিফলিত হওয়া অবশ্যই দরকার। কিন্তু আগামীর শিক্ষাবর্ষের স্কুলের ছেলেমেয়েদের কাঁধে নতুন বই তুলে দেওয়ার বাধ্যবাধকতার কারণে মাত্র দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে পাঠ্যপুস্তকের পরিমার্জন করতে হয়েছে। তাতে হয়তো কিছু ভুল-ভ্রান্তি থেকে যাবে।

তিনি বলেন, আশা করি সকল মহলে এবং শিক্ষাবিদদের মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষাক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পরবর্তীতে আরও সংষ্কার সম্ভব হবে। সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত ও  যুগোপযোগী করার জন্য স্বল্প মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি কী কী সংষ্কার করা যায় সেজন্য সকল বিশেষজ্ঞ এবং সকল মতামত, সকল আদর্শিক চিন্তাবিদদের আহ্বান করছি। প্রয়োজনে আমরা আমরা একটি সংস্কার কমিশনের চেষ্টা করবো।

ছাত্র-শিক্ষকদের আচরণবিধি

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আজকাল ছাত্র এবং শিক্ষক রাজনীতি অনেক কথা হচ্ছে। একটা সমস্যা হলো এখনকার তরূণ প্রজন্ম ছাত্র রাজনীতির নামে চরম অপরাজনীতি, দুর্ব্যত্তায়ন এবং দখলদারিত্বের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেই পরিচিত।

ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে এই সরকার গঠিত হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ বিশ্বমানের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা। সেই সঙ্গে মুক্ত চিন্তা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার স্বাধীনতা। যেকোনো বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটা আচরণবিধি নির্ধারিত থাকে। আমি আশা করবো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের নিজস্ব আচরণ বিধি থাকবে।   

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২৪
এমআইএইচ/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।