ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

একমাসেও উল্লেখযোগ্য কর্মতৎপরতা নেই নাগরিক কমিটির

ফাহিম হোসেন, ইউনিভার্সিটি করেস্পন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৪
একমাসেও উল্লেখযোগ্য কর্মতৎপরতা নেই নাগরিক কমিটির

শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের পর ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে ছাত্রনেতাসহ তরুণদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। আত্মপ্রকাশের পর প্রাথমিকভাবে ৮টি কাজ করার কথা থাকলেও গত একমাসে কমিটির উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মতৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে দেশে নানা অস্থিরতা বিদ্যমান রয়েছে। নাগরিক কমিটি এসব সমস্যা নিরসনে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি।

এবছরের ৮ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে আহ্বায়ক এবং ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে আইনি সহায়তা দিতে আরও ৭ জনকে যুক্ত করা হয়। আজ এ কমিটির এক মাস পূর্ণ হলো।

আত্মপ্রকাশের সময় গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা; ছাত্র-জনতার হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে কর্মসূচি গ্রহণ; রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজে সহযোগিতা ও জবাবদিহির পরিসর তৈরি করা; আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা; গণপরিষদ গঠন করা গণভোটের মাধ্যেম নতুন সংবিধান প্রণয়নসহ ৮টি প্রাথমিক কাজ ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু নাগরিক কমিটির গত একমাসের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে শাহবাগে একটি সমাবেশ এবং যাত্রাবাড়ীতে শহীদদের নিয়ে একটি মতবিনিময় ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি প্লাটফর্মটি।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত একমাসে নাগরিক কমিটি কয়েকটি কাজ করেছে। কমিটি ঘোষণার পর প্রথমবার জুলাই অভ্যুত্থানের দুই মাস উপলক্ষে ৫ অক্টোবর শাহবাগে একটি সমাবেশ করে নাগরিক কমিটি। সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও তার পরিবারকে যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, আহতদের চিকিৎসা দেওয়া, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে নজর দেওয়া, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা, আশুলিয়ায় শ্রমিক হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ঘটনার নিষ্পত্তি, ঘুম হওয়া ব্যাক্তিদের সন্ধান, পাহাড়ে অস্থিরতা নিরসনসহ একাধিক বিষয় সরকারের নজরে আনেন কমিটির সদস্যরা।

এছাড়াও শহীদদের আইনি সহায়তা দিতে নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে একটি আইনি সেল গঠন করা হয়। এই সেল জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ সাকিব ও ওসমান গণির পরিবারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা করতে সহায়তা করে।

যাত্রাবাড়ীতে ৬ অক্টোবর শহীদ ও আহত পরিবারের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভা করে এই কমিটি। আহতদের পাশে থাকতে একটি স্বাস্থ্য সেল গঠন করেছে এই কমিটি। একইসঙ্গে ঢাকা রাইসিং নামে ঢাকার সকল থানায় কমিটি দিয়ে সংগঠিত করতে কার্যক্রম শুরু করেছে প্লাটফর্মটি।

কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, আপাতত কমিটি করে তরুণদের সংগঠিত করে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে নাগরিক কমিটি। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার চেষ্টা করছেন তারা।

নাগরিক কমিটির অন্যতম সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাইসিং ঢাকা’ নামে আমরা একটি কর্মসূচি শুরু করেছি। ঢাকার ৫২টি থানায় আমরা কমিটি গঠন করব। এই কমিটির পরিসর এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে ন্যূনতম ২০ সদস্যের হতে পারে। আশা করি আগামী এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা মহানগরের মধ্যে আমরা একটি কাঠামো দাঁড় করাতে পারব। তারপর নিয়মিত কর্মসূচি দেওয়া যাবে।

উল্লেখযোগ্য কাজ না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে লক্ষ-উদ্দেশ্যসহ কোনো সংগঠন কমিটি গঠনের জন্য একাধিক সংলাপ ও মতবিনিময় করতে হয়। এসব করতে একমাস চলে যায়। তবুও আমরা কিছু প্রোগ্রাম করেছি। এছাড়া বিভিন্ন উদ্ভূত পরিস্থিতি-যেমন পাহাড়ের ঘটনা বা মব জাস্টিসে আমরা নিজেদের বক্তব্য পরিষ্কার করেছি। আমরা মূলত সরকারকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে নতুন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, আমরা সবগুলো রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে বসেছি। শীঘ্রই আমরা ঢাকাকে সংগঠিত করব।

গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানের পুনরায় লিখার বিষয়টি তাদের প্রাথমিক কাজ উল্লেখ করেছে নাগরিক কমিটি। তবে সরকার বিদ্যমান সংবিধানের অধীনের শপথ গ্রহণ করে দেশ পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে নাগরিক কমিটির পদক্ষেপ জানতে চাইলে আখতার বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে আমাদের নতুন করে সংবিধান লেখার একটা আলাপ আছে। আমরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় গণআলোচনা জারি রাখব। ইতোমধ্যে আমরা প্রশ্ন তুলেছি সংবিধান ও এই রাষ্ট্রপতি কেন বহাল থাকবে?

মাঠের কর্মসূচি ছাড়াও অন্য উপায়ে সরকারের নজরে আনবেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের একটি পলিসি টিম আছে। রাষ্ট্র থেকে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা যেন জনমুখী নীতি হয়, সেজন্য এই টিম কাজ করছে। আমাদের বিপ্লব অর্ধেকে থেমে গেছে। এটাকে পূর্ণ বিপ্লবে রূপান্তর করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।