রাজশাহী: ভালো চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা হাতে তুলে দিয়ে কৌশলে এক নবজাতককে নিয়ে এক নারী উধাও হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিশুটির নানী। তবে এ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে থানায় যাওয়ার পর পুলিশ তার কতাবার্তায়ও ‘অসংলগ্নতা’ পেয়েছে বলে জানা গেছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজশাহী নগরে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ঘটনাটি জানাজানি হয়। ওই নবজাতকের খোঁজ মেলেনি এখনো। তবে পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ওই নারীকে শনাক্ত এবং নবজাতককে উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির বাবার নাম মো. সুমন মিয়া। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর গ্রামে। সুমনের স্ত্রীর নাম মনি খাতুন (১৮)। তার বাবার গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার গোকুলনগর গ্রামে।
সন্তান প্রসবের জন্য গত ৪ অক্টোবর মনিকে রামেক হাসপাতালের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছিল। এরপর ৬ অক্টোবর মনি খাতুন একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।
তবে শিশুটি জন্মের পর তার ওজন ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এ জন্য তাকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। ৯ অক্টোবর অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী মাস্ক পরা অবস্থায় ওই নবজাতকের মায়ের কাছে এসে খোঁজখবর নেন।
তখন শিশুর মা তার সমস্যার কথা ওই নারীকে জানান। ওই নারী তখন তাকে আশ্বস্ত করেন এবং বলেন যে, বাইরের একটি ক্লিনিকে ভালো ডাক্তার আছেন। সেখানে দেখালে তার সন্তান সুস্থ হয়ে যাবে। পরে নবজাতকের নানী রুমি বেগমকেও তিনি বিষয়টি জানান। এরপর ভালো চিকিৎসা ও সন্তানের সুস্থতার কথা ভেবে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন মনি ও তার মা।
মনি খাতুন জানান, ওই নারী তার মাকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে শিশুদের চিকিৎসা ও টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন। পরে ৯ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে তার মা রুমি বেগম শিশুটিকে কোলে নিয়ে বলেন, ‘বাচ্চার গরম লাগছে। একটু বাইরে বাতাস খাইয়ে নিয়ে আসি। ’
শিশুর বাবা সুমন আলী জানান, সোমবার তার স্ত্রী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। বুধবার বিকেলে হাসপাতালে তার শাশুড়ি বাচ্চাটিকে বাতাস খাওয়ানোর জন্য কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক নারী নিজেকে স্বেচ্ছাসেবী পরিচয় দিয়ে তার কাছে আসেন। এরপর কথায় কথায় শিশুটির নানীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং সহায়তার কথা বলে কিছু নগদ টাকাও তার হাতে জোর করে ধরিয়ে দেন। এরপর ভালো চিকিৎসার কথা বলে নানীসহ শিশুটিকে নিয়ে মহানগরীর একটি আবাসিক হোটেলে যান। তারপর সেখান থেকে কৌশলে শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যান।
এদিকে মহানগরীর রানীবাজার বাটার মোড় এলাকার ওই হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, বুধবার বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে দুজন নারী হোটেলে প্রবেশ করছেন। এরপর মুখে মাস্ক পরিহিত ওক নারী হোটেলের রিসিপশনে রুম বুকিং দিচ্ছেন। তার পাশেই নবজাতককে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নবজাতকের নানী। পরে একটি রুমে প্রবেশ করেন তারা। এরপর বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে হোটেলের রুম থেকে মাস্ক পরিহিত নারী শিশুটি নিয়ে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে নবজাতকের কোনো সন্ধান মিলছে না।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক (ইএমও) ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, এই ঘটনা জানাজানি হওয়া পর থেকে তারা নিজেরাও ঘটনাটি ক্ষতিয়ে দেখছেন। এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনকে জানিয়েছেন। তারা সব সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত একটা সমাধানে আসতে পারবেন বলেও আশা করছেন।
অন্যদিকে ঘটনার পর বুধবার রাতে নবজাতকের নানা হাসান আলী ও নানী রুমি বেগম রাজপাড়া থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করতে যান। কিন্তু তাদের কথাবার্তা ‘সন্দেহজনক’ হওয়ায় পুলিশ তাদের আটক করে রাখে।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, তাদের আটকের বিষয়টি সেরকম নয়। কথাবার্তা সন্দেহজনক ছিল। এছাড়া তারা ওই অজ্ঞাত নারীর কাছ থেকে কিছু টাকাও নিয়েছেন। তাই জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, রংপুর থেকে শিশুটির বাবা এসেছেন। তিনি বর্তমানে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই নারীকে শনাক্তের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি পুলিশ ওই চুরি হওয়া নবজাতক শিশুটিকেও উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৪
এসএস/এইচএ/