অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব পেয়েই নানা বিতর্ক-সমালোচনার বেড়াজালে আটকে পড়েছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বলা হচ্ছে, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ দমনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছিল - তার সমর্থন জানিয়েছিলেন ফারুকী।
এ বিষয়ে ‘শাপলা চত্বর জঞ্জালমুক্ত হয়েছে’ একটি স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে সে সময় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী স্ট্যাটাসটি লিখেছিলেন।
এ নিয়ে সমালোচনা যখন তুঙ্গে তখন ফারুকী জানালেন, এমন কোনো স্ট্যাটাস সামাজিকমাধ্যমে তিনি পোস্ট করেননি। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটকে ‘ফেইক’ দাবি করলেন এ নির্মাতা।
এছাড়া কিছু বিশ্বাস করার আগে তা যাচাই করে নিতেও অনুরোধ জানান সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাত ১১টা ৫ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বিষয়টি স্পষ্ট করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সেখানে নিজেকে মধ্যপন্থার ফিল্মমেকার ও মানুষ দাবি করে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, ‘আমি চাই পরস্পরবিরোধী মত নিয়েও আমরা এমপ্যাথি নিয়ে পাশাপাশি থাকি। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে একে অপরের পাশাপাশি থাকা এবং কোনো ধর্মীয় বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় কটাক্ষ এবং হাঙ্গামায় না জড়ানোর জন্য একটা লেখা লিখে বহুবিধ ট্যাগও খেয়েছি। আমাদের আজিজ মার্কেটে দীপন খুনের পর লিখছিলাম। ’
তিনি স্পষ্ট করেন, বহু ডিজিটাল কার্ড এবং ফেইক স্ক্রিনশট ঘুরছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে আমি নাকি ২০১৩ সালে বলেছি- ‘শাপলা চত্বর জঞ্জালমুক্ত হয়েছে’। ডাহা মিথ্যা কথা। শাপলা চত্বরের ঘটনার পরে আমি বরং লিখেছি, মাদরাসার সাধারণ ছাত্রদের মৃত্যুতে আমি ঘুমাতে পারছি না! ইংরেজিতে লেখা পোস্টটা আগ্রহীরা দেখে আসতে পারেন। আমার ছবি দিয়ে কিছু কিছু ফেইক উইকিপিডিয়া স্ক্রিনশটও ঘুরছে। প্লিজ ইগনোর অল দিজ। ’
তার আপন দুই ভাই মাদরাসায় পড়েছে জানিয়ে ফারুকী প্রশ্ন করেন, ‘আমি সাধারণ মাদরাসাছাত্রদের মৃত্যুতে উল্লাস করব? মাদরাসার ছাত্র কেন! কোনো মানুষের মৃত্যুতে আমি উল্লাস করব? আমি তো এমনকি অপরাধীর মৃত্যুতেও শোক করি। মিথ্যা কথা ছড়ানোরও তো একটা মাত্রা থাকে। ’
এ নির্মাতা বলেন, ‘আমার প্রযোজনায় আমার ছোট ভাই কিবরিয়া পরিচালনা করেছিলো ‘আব্দুল্লাহ’ যেখানে দেখানো হয়েছে কেবল মাত্র মাদরাসায় পড়ার কারণে একটা ছেলেকে আমাদের সো-কলড প্রগতিশীল সমাজে কীরকম স্টিগমা ফেস করতে হয়। বোরকা স্টিগমাটাইজ করা নিয়ে বহুবার লিখেছি। ’
সব কিছু বিশ্বাস করার আগে একটু কষ্ট করে যাচাই করে নিতে অনুরোধ জানান ফারুকী।
স্ট্যাটাসের শেষে তিনি লেখেন, আমরা আমাদের কাজটা এনজয় করছি। আশা করি আগামী সপ্তাহের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুটা করতে পারব যার ভেতর দিয়ে প্রাথমিকভাবে আট বিভাগীয় শহরে একটা নবতরঙ্গ শুরু করতে পারব। পারবো জুলাই ন্যারেটিভ নির্মাণ করতে, ১৫ বছরের দুঃশাসনের এক্স-রে রিপোর্ট তৈরি করতে। সো লেটস নট ওয়েস্ট আওয়ার এনার্জি বিহাইন্ড হেইট্রেড!
গত ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া প্রসঙ্গে ফারুকী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন, ‘আমি কখনোই কোনো পদ কিংবা কোনো চেয়ারে বসব, এটা ভাবি নাই। কিন্তু প্রফেসর ইউনূসের সহকর্মী হওয়াটা টেম্পটিং, না বলাটা মুশকিল। মিস্টার ইউনূসের সঙ্গে কাজ করা লোভনীয় বিষয়। আমার অনেক আগে থেকেই তার সঙ্গে কাজ করার সম্পর্ক রয়েছে। তার কাজ সম্পর্কে আমার ধারণা রয়েছে। তাই আমি সম্মতি দিয়েছি। কারণ ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্ম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দুটি সুবিধা ভোগ করলে আমি গর্ববোধ করব। ’
ফারুকী উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর পরেই দেশের বিভিন্ন জায়গা বিক্ষোভ-মিছিল হয়। ‘এক-দুই-তিন-চার ফারুকী তুই গদি ছাড়’, ‘ফারুকীদের আস্তানা ভেঙে দাও ঘুরিয়ে দাও’, ‘বাংলাদেশে হবে না মুজিববাদের ঠিকানা’-এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৪
এসএএইচ