ঢাকা: রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এক ছাদের নিচে চলা নির্মাণ, আবাসন ও বিদ্যুৎবিষয়ক সব সামগ্রীর প্রদর্শনী শেষ হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় চারটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে এসব সামগ্রী একসঙ্গে পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আইসিসিবিতে কনফারেন্স অ্যান্ড এক্সিবিশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (সেমস-গ্লোবাল ইউএসএ) আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী চলা এ মেলার পর্দা নামবে। মেলাটি শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর)।
প্রদর্শনীগুলো হলো—বিল্ড সিরিজ অব এক্সিবিশন বিষয়ক ‘২৯তম বিল্ড বাংলাদেশ ২০২৪’; রিয়েল এস্টেট ও হাউজিং সেক্টর বিষয়ক ‘২৩তম রিয়েল এস্টেট এক্সপো ২০২৪’; ওয়াটার প্রযুক্তি ও সমাধান বিষয়ক ‘ষষ্ঠ ওয়াটার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এক্সপো ২০২৪’; বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন ও নবায়নযোগ্য শক্তি বিষয়ক ‘২৬তম পাওয়ার বাংলাদেশ ২০২৪’; ‘২১তম সোলার বাংলাদেশ ২০২৪’, এবং ‘ষষ্ঠ ঢাকা আন্তর্জাতিক লাইটিং এক্সপো ২০২৪’।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান জানায়, মেলায় পাঁচ শতাধিক বুথ নিয়ে ২০টি দেশের প্রায় ১৯৫টিরও বেশি কোম্পানি অংশ নেয়। মেলায় নির্মাণ খাতের ক্রেইন থেকে শুরু করে গৃহস্থালির ছোট্ট মেশিন ও ঘরের মেঝে পরিষ্কারের যন্ত্র পর্যন্ত প্রদর্শন করা হয়।
সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, শেষ দিনেও মেলায় দর্শনার্থী ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় পণ্য উৎপাদনকারী, বিপণন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা স্ব স্ব পণ্য তুলে ধরেছে তাদের বুথে। দর্শনার্থীরা বুথ ঘুরে ঘুরে সেসব দেখছেন। অনেকে আবার পছন্দের পণ্যটি নেওয়ার জন্য অর্ডারও দিচ্ছেন।
প্রদর্শনীতে সৌরশক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায় এমন সোলার আইটেম নিয়ে এসেছেন ব্লু কার্বন নামের একটি চীনা কোম্পানি।
কোম্পানিটির সেলস ম্যানেজার আবদুল নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সোলার স্ট্রিট লাইট, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি, ফসফেট ব্যাটারি, সোলার সাবমারসিবল পাম্পসহ সোলার আইটেমগুলো মেনুফ্যাকচার করি। আমাদের হেড অফিস ও ফ্যাক্টরি সব চায়নাতে।
মেলায় কেমন সারা পেলেন জানতে চাইলে এই সেলস ম্যানেজার বলেন, বাংলাদেশে অনেক আগে আমরা একটা ফেয়ারে অংশ নিই। তবে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটাই আমাদের প্রথম ফেয়ার। এবারের মেলায় আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আগামী থেকে আমরা সব ধরনের প্রদর্শনীতে অংশ নেব। মেলায় গ্রাহকরা আমাদের প্রোডাক্টগুলোর মান কেমন তা দেখে গেছেন। তারা আমাদের সোলার টেকনোলজির প্রোডাক্টগুলো দেখে খুবই সন্তুষ্ট হয়েছে। আমরা তাদের কন্টাক্ট নাম্বার রেখেছি। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আশা করছি ভালো একটা সেল আমরা এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে পাব।
সোলার টেকনোলজির মধ্যে একদমই নতুন কোনো ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে মেলায় এসেছেন জানতে চাইলে এই সেলস ম্যানেজার বলেন, আমাদের কোম্পানির বস নিজেই প্রোডাক্ট ডিজাইন করেন। আমরা ইউনিক সব প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করি। বাসাবাড়িতে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য ‘প্লাগ অ্যান্ড প্লে’ হিসেবে আমাদের একটি নতুন প্রোডাক্ট। উঠানে বা ছাদে সোলার বসিয়ে সরাসরি মাল্টিপ্লাগের মধ্যে সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। এর একটি দিয়ে তিনটি লাইট, দুইটি ফ্যান এবং মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া যাবে। এছাড়া আমাদের কাছে ডিসি ফ্রিজও আছে, ফিশারিজঘাটে অনেক সময় বিদ্যুতের ঝামেলা হয় সেখানে। সে সময় আমাদের এই ডিসি ফ্রিজ ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি যারা ক্যাম্পিং করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য সোলার পাওয়ার ব্যাংকের মতো একটি প্রোডাক্ট আছে যেটাকে আমরা ‘কার্বন ফ্রি’ বলে থাকি। এর মাধ্যমে মোবাইল ফোন চার্জ দেবার সিস্টেম, লাইট এবং ইমার্জেন্সি লাইট দেওয়া আছে।
পরিবেশ রক্ষায় পোড়া ইটের ব্যবহার কমানোর জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আগামী কয়েক বছরের ভেতর সরকারি বিভিন্ন প্রোজেক্টে শতভাগ পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ করে ব্লক ইট ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
মেলায় এমনই পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট, পার্কিং টাইল ইত্যাদি সব ধরনের পণ্য তৈরি মেশিন নিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছেন নিউ টেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি দেশীয় কোম্পানি। কোম্পানিটি জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ দেশীয় তৈরি ব্লক ইট মেশিন তৈরি করছে।
নিউ টেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রোডাক্টগুলো সম্পর্কে কোম্পানিটির এক্সিকিউটিভ অফিসার অন্তর হোসেন সাগর বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কনক্রিট ব্লক ও ব্রিকস তৈরি জন্য মেশিনারিজ তৈরি করে থাকি। আমাদের এই মেশিন কিছু অংশ যেমন ইলেক্ট্রিক্যাল কম্পোনেন্ট ও মোটর দেশের বাইরে থেকে আসে। এছাড়া সম্পূর্ণ মেশিন আমরা দেশে তৈরি করে থাকি।
তিনি বলেন, কেউ যদি আমাদের থেকে সিমেন্টের ব্লক ইট বানানোর মেশিন নিতে চায়। তাহলে আমরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী মেশিন দেব। কারো বাজেট যদি কম থাকে সেক্ষেত্রে আমরা তাদের ছোট মেশিন নেওয়ার পরামর্শ দিই। প্রায় তিন লাখ টাকায় আমাদের ছোট মেশিন পাওয়া যাবে। এই মেশিন দিয়ে প্রতি আট ঘণ্টায় ১ হাজার ৬৮০ পিস ব্লক ইট তৈরি করা সম্ভব। আর বড় মেশিনের ক্ষেত্রে প্রতি আট ঘণ্টায় ২৩ হাজার ব্রিক এবং হলো ব্রিক্স তৈরি করা যাবে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। আর এই বড় মেশিনের সম্ভাব্য মূল্য হচ্ছে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, কোনো গ্রাহক যদি আমাদের কাছ থেকে মেশিন নিতে চায় তাহলে তারা আমাদের সঙ্গে অনলাইন বা অফলাইনে যোগাযোগ করতে পারবেন। আমাদের সমগ্র দেশে ছোট মেশিন থেকে শুরু করে বড় মেশিনের ৪৫০টির বেশি সেটআপ করতে ইতোমধ্যে আমরা সক্ষম হয়েছি।
মেলায় কেমন সাড়া পেয়েছেন জানতে চাইলে নিউ টেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের এই এক্সিকিউটিভ বাংলানিউজকে বলেন, এবারই মেলায় আমাদের প্রথম অংশগ্রহণ। কাস্টমারদের থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। যদিও আমাদের স্টলটি একটু ভেতরে। যে কারণে দর্শনার্থীদের আনাগোনা কিছুটা কম ছিল। তবে মেলায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতাটি খুবই ভালো ছিল। সামনে এমন মেলায় আমরা আবারও অংশ নেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
ইএসএস/এসএএইচ