লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্মরণসভা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ব্যানারে সদর উপজেলা পরিষদ হল রুমে এ আয়োজন করা হয়।
স্মরণ সভায় গত ৪ আগস্ট যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত সাদ আল আফনান, সাব্বির হোসেন ও কাউছার হোসেনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সেসময় আহত খালেদ মাহমুদ সুজনসহ আহত অন্যরাসহ তাদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবি ছিদ্দিক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা দত্ত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জেপি দেওয়ান, জেলা সিভিল সার্জন আহমেদ কবির, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু, জেলা জামায়াতের আমির এসইউএম রুহুল আমিন ভুঁইয়া, ছাত্র সমন্বয়ক আরমান হোসেন, সারোয়ার হোসেন ও বায়েজিদ হোসেন। এসময় শহীদ পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য দেন।
ছাত্র সমন্বয়কসহ শহীদদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্যে বলেন, আহতদের দ্রুত সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। সুজনের শরীরে এখনো ৭টি ছররা গুলি রয়েছে৷ তাকেসহ গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। শহীদ ও আহতদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৪ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলকারীদের ওপর গুলি চালানো হায়েনাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্পিড বাড়াতে হবে। যেভাবে আন্দোলন চলাকালীন আমাদের সহযোদ্ধাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধরে আনা হয়েছে। ঠিক সেভাবে হত্যা মামলার আসামিদের খুঁজে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ঘটনার ৩ মাস পার হয়ে গেলেও প্রধান আসামি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুসহ ঘাতকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগের স্পিড এখন দেখা যাচ্ছে না। সেই স্পিড কোথায় গেল?
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। শহীদদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে র্যাব গুলি করেছিল। ওইদিন আমাকে রক্ষা করতে আসা আরও ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর একদিন পর ডা. ফয়েজ আহমেদকে গুলি করে হত্যার পর ছাদ থেকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এমন হত্যাকাণ্ড দেশের আর কোথাও হয়নি। সেসময় পুলিশ-র্যাবের যে স্পিড ছিল তা আজ কোথায়? ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এবি ছিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় এখনো পর্যন্ত ১০০ জনের কাছাকাছি আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সবসময় সত্যের পক্ষে কাজ করেছি। ছাত্রদের আন্দোলনে কারো প্রতি আমরা অন্যায় আচরণ করেনি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিসি রাজীব কুমার সরকার বলেন, শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি আহতদের সুচিকিৎসা, শহীদ পরিবারের নিরাপত্তা ও গণঅভ্যুত্থানে হামলা-গুলিবর্ষণকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করা। আমরা এসব দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করি। ইতোমধ্যে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। সিভিল সার্জন মেডিকেল টিম গঠন করেছেন। এছাড়া আমরা স্থানীয়ভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। শহীদ পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
আরএ