ঢাকা: ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর পাঁচ বছরেও এর বিচার পায়নি ভুক্তভোগীর পরিবার। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর প্রথম আলোর সাময়িকী ‘কিশোর আলো’র অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে তার মৃত্যু হয়।
আলোচিত এ মামলাটির আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। তবে আসামিপক্ষের আবেদনে এ মামলাটির বিচার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে আটকে যায়। এতে এ ঘটনার পাঁচ বছর পার হলেও ভুক্তভোগী পরিবার বিচার পায়নি।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহপরান তুষার, নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম, ডেকোরেশন ও জেনারেটর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জসীম উদ্দিন, মোশাররফ হোসেন, সুজন ও কামরুল হাওলাদার।
আসামিদের সবাই জামিনে রয়েছেন। এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ ওমর ফারুক আসিফ বলেন, ‘মামলাটির বিচার কার্যক্রমে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। আমি জজ কোর্টের অংশটুকু দেখি। এ ছাড়া কিছু জানি ন ‘।
২০১৯ সালের ১ নভেম্বর ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজে প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যু হয়। এরপর ৬ নভেম্বর নাইমুল আবরারের বাবা মজিবুর রহমান প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক এবং কিশোর আলোর প্রকাশক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শিক্ষার্থী নাইমুল আবরারের মরদেহ দ্রুত কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় হওয়া অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে নতুন মামলা একীভূত করে তদন্ত করে মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রথম আলো সম্পাদকসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল আলিম।
প্রতিবেদনে নাইমুল আবরার নিহত হওয়ায় কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করা হয়।
পরে ওই বছরের ১২ নভেম্বর প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে একই সঙ্গে কিশোর আলোর সম্পাদক ও লেখক আনিসুল হককে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। এই অভিযোগ গঠনের বৈধতা নিয়ে ও মামলা বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন প্রথম আলো সম্পাদক। মামলা বাতিল চেয়ে প্রথম আলো সম্পাদকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ২১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করেন। পরে ২৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আনা আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। এতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট বিভাগ যে আদেশ দিয়েছেন, তা আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার বলেন, ‘মামলাটির বিচার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ রয়েছে। এ মামলায় কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। ’
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সঠিকভাবে বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনা না করে এ রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং এতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা করা হয়নি। ঘটনা ঘটার পর রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ ক্যাম্পাসের উল্টোপাশের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রাহাতকে না নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীর বাবা মজিবুরকে কিছু জানায়নি। তাঁর বন্ধু ও সহপাঠীর মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন। অথচ আনুমানিক ৩টার সময় সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। ৪টা ১৫ মিনিটে ইউনিভার্সেলে ভর্তি করা হয়, ৪টা ৫১ মিনিটে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
এসআইএস