ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জুলাই বিপ্লবের ‘স্টালিনগ্রাদ’ যাত্রাবাড়ীতে হয়ে গেল শহীদদের স্মরণে জেয়াফত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৪
জুলাই বিপ্লবের ‘স্টালিনগ্রাদ’ যাত্রাবাড়ীতে হয়ে গেল শহীদদের স্মরণে জেয়াফত ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা ও স্মরণে ‘স্টালিনগ্রাদ’ যাত্রাবাড়ীতে ‘বাংলাদেশের জনগণ’ নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠন দিনব্যাপী এক বিশেষ জেয়াফতের আয়োজন করেছে।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ী শহীদ জিয়া পার্ক-এর সামনে থেকে এক র‍্যালির মাধ্যমে দিনব্যাপী এই জেয়াফতের আয়োজন শুরু করা হয় বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ‘বাংলাদেশের জনগণ’ এর মুখপাত্র আবু মুস্তাফিজ।

 

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত আন্দোলনটি ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংগঠিত এই আন্দোলন হাসিনা সরকারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, ডেমরা, কদমতলী ও রায়েরবাগে সংগঠিত এই বিপ্লবে শহীদদের সম্মান জানাতে করা হয়েছে এই বিশেষ আয়োজন।  

সকালে র‍্যালি করার মধ্য দিয়ে আয়োজনের শুরু হয়ে শহীদদের স্মরণে দুপুরে যাত্রাবাড়ী এলাকাবাসীকে নিয়ে সামাজিক জেয়াফতের আয়োজন করে সংগঠনটি।

আর বিকেলে জুলাই স্মৃতি রোমন্থন করার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিন ব্যাপী আয়োজনের। এ সময় বেশ কয়েকটি শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।  

পরিবারের হারানো সদস্যদের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।  

তারা বলেন, আন্দোলনকারীরা একত্রিত হয়ে সরকারের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন এবং তাদের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। এই আন্দোলন জনসমর্থনের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।  

আবু মুস্তাফিজ বলেন, আমাদের এই সংগঠনের মাধ্যমে শহীদদের পরিবারের জন্য একটি ফান্ড তৈরি করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে আমরা কিছুদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলন করে ৭ দফার দাবি জানাই। এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জনগণ কী চায় তা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণ তার রাজনৈতিক শক্তি ফিরে পাবে।  

তিনি বলেন, আজকের এই আয়োজনে প্রায় ১৫ হাজার লোকের জন্য জেয়াফত খাবারের আয়োজন করা হয়। এখানে যাত্রাবাড়ীর তরুণ ছাত্র-জনতা সার্বিকভাবে সহায়তা করে। প্রথমবারের মতো এই আয়োজন করায় হয়তো আমাদের ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে, সেজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া এই আয়োজন সম্পন্ন করতে পারায় আমরা আনন্দিত।

তিনি আরও বলেন, আজকের এই আয়োজনের মতো করে আগামী এক মাস পর বনশ্রীতে সামাজিক জেয়াফতের আয়োজন করা হবে। এমন আয়োজন আমাদের সারাদেশে পরিচালনা করার ইচ্ছা আছে।

আমাদের বাংলাদেশের জনগণ সংগঠনের ৭ দফা দাবি হচ্ছে - 

১. দিল্লীর তাঁবেদার ও গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট শক্তি আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার বৈধতা রাখে কি-না, গণভোটের মাধ্যমে তা নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনে সংঘটিত সকল গুম, খুন, গণহত্যা, দুর্নীতি ও অপরাধের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগীদেরকে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক পর্যায়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।  

২. ফ্যাসিস্ট রেজিমের রেখে যাওয়া রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে এবং গণ-ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকল্পে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য অবিলম্বে গণপরিষদ গঠন করতে হবে এবং নয়া নির্মিত সংবিধান গণভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে।  

৩. অবাধে ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে একটি ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকন্সিলিয়েশন কমিশন’ গঠন করতে হবে। পাশাপাশি সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর মৈত্রী স্থাপন করতে হবে। বিশেষত জুলাই অভ্যুত্থানে গুলি করা এবং গুলির নির্দেশদাতা প্রতিটি ব্যক্তিকে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।     

৪. বাংলাদেশে ভারতপন্থী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে তাদের গত বিশ বছরের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব/ব্যালেন্স-শিট জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশবিরোধী উদ্দেশ্যমূলক বয়ান উৎপাদন ও বণ্টনের ব্যাপারে তাদের প্রকাশ্যে জবাবদিহি করতে হবে।

৫. উপরিউক্ত প্রতিষ্ঠানসহ ফ্যাসিবাদী শক্তির সকল সহযোগী প্রতিষ্ঠান/সংগঠন সংস্কার, পুনর্গঠন, পর্যবেক্ষণ ও গণ-জবাবদিহিতা নিশ্চায়নের স্বার্থে একটি স্বাধীন বোর্ড গঠন করতে হবে। এ সকল প্রতিষ্ঠান/সংগঠন যেন বাংলাদেশ ও তার জনগণের পক্ষে অবদান রাখতে বাধ্য থাকে, তার জন্য এই বোর্ড প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার এখতিয়ার রাখবে।  

৬. ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এ তিন অবৈধ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেইসঙ্গে ফ্যাসিস্ট রেজিমের সকল প্রকাশ্য ও গোপনীয় চুক্তি জনসম্মুখে হাজির করতে হবে।  

৭. দিল্লী কিংবা ফ্যাসিস্ট শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সকল দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও পক্ষকে জনতার মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে, যা বাংলাদেশের পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণে জনগণকে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৪
ইএসএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।