ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): সাদপন্থিদের অনবরত উগ্রতার প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। টঙ্গীর ইজতেমায় হামলা ও নিহতের ঘটনায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি, দিবাগত রাতে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ঘুমন্ত নিরীহ আলেম-ওলামা ও সাধারণ মুসল্লিদের ওপর একটি বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক সংঘটিত এ হামলায় অন্তত চার শতাধিক মুসল্লি গুরুতর আহত হন। ২০২৪ সালের এই হামলা ২০১৮ সালের সাদপন্থীদের একই হামলার পুনরাবৃত্তি মাত্র। এইসকল সহিংস কার্যকলাপ শুধু ধর্মীয় পরিবেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের ওপরেও গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।
তিনি বলেন, আমরা সাদপন্থীদের এই বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাতে চাই। অন্যথায় বিচারব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা বিনষ্ট হলে দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়বে।
জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তাণ্ডবের মাধ্যমে সাদপন্থীদের এই ষড়যন্ত্র দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারতিস আলমের মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজলেও চিহ্নিত এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শান্তির বার্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পথ বেছে নিয়েছে। বিশেষ এই গোষ্ঠীর অনবরত এই উগ্রতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সচেতন ছাত্রসমাজকে ‘ভুঁইফোড়’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, হামলার আগের-দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সচেতন ছাত্র সমাজ’ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আমরা আশঙ্কা করছি, হামলার পেছনে এই সংগঠনটির সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই সংগঠনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এই সংগঠনের সদস্যদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো- অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ইতোমধ্যে যেসকল চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও তাদের হুকুমদাতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেসকল এজাহারভুক্ত আসামিদের আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে হবে; তৎকালীন প্রশাসনের মদদপুষ্ট এই সাদপন্থীদের ২০১৮ সালে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে তৎক্ষণাৎ গঠিত ভুঁইফোড় সংগঠন সচেতন ছাত্র সমাজের সদস্যদের অবিলম্বে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান মোহাম্মদ ইয়াহয়া, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী শাকিল খান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী শামীম হাসান ও শাহরিয়ার আলম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
এফএইচ/এমজে